শর্তের বেড়াজালে কমছে আমদানি
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বাড়ায় বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে দেশ। সংকট সৃষ্টি হয় মার্কিন ডলারের। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে আসে। অর্থনীতির এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আমদানির লাগাম টানতে নানা শর্ত দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে আমদানি। চলতি বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে নিষ্পত্তির হারও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৭০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। আগের মাস আগস্টের তুলনায় যা ৬৩ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বরে আমাদনি এলসি নিষ্পত্তিও আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের মাস আগস্টে আমাদনি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৩৩ কোটি ডলার। এছাড়া গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে।
করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। এর প্রভাবে আমদানির খরচও বেড়ে যায়। তাই আমদানি ব্যয় কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ের নানা উদ্যোগ নেয় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের টাকা ঠিকমতো ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে তদারকি জোরদার করা হয়।
তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আগস্টে রেমিট্যান্স বাড়লেও সেপ্টেম্বরে তা কমেছে। একইসঙ্গে টানা ১৩ মাস ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর দেশের রপ্তানি কমেছে। এতে করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকেই এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কমতে শুরু করে। গত জুন মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৪৫ কোটি ডলার, যা জুলাইয়ে ৬৩৫ কোটি ডলারে নামে। আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ আরও কমে ৬৩৩ কোটি ডলারে নেমেছে। আর সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে আরও কমে এর পরিমাণ ৫৭০ কোটি ডলারে নেমেছ।
তবে এলসি খোলার পরিমাণ যে হারে কমেছে, এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ একই হারে কমেনি। গত জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৭৫০ কোটি ডলার। পরের মাস জুলাইয়ে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি লাখ ডলার। আগস্টে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ আরও কমে ৭৩২ কোটি ডলারে নেমেছে। আর সেপ্টেম্বরে তা কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮৫ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৬ কোটি, মার্চে ৭৬৭ কোটি, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি ও মে মাসে ৭০৫ কোটি, জুনে ৭৭৫ কোটি, জুলাই ৭৩৫ কোটি, আগস্ট ৭৩২ কোটি ও সবশেষ সেপ্টেম্বরে ৬০০ কোটি ডলার। চলতি বছরের নয় মাসে ৬ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে।
আমদানি কমলেও ডলারের সংকট কাটছে না। এ অবস্থায় বাজারের সংকট কাটাতে ডলার বিক্রিও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ডলার।
এভাবে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানি কমার পরও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) কমছে। গত বছর ২৫ আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন। এখন তা ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নেমে এসেছে।
এসআই/এসএম