আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদেরও বড় ছাড়
ব্যাংক খাতের পর ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মোট বকেয়া অর্থের মাত্র ৪ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করা যাবে। তিন দফায় ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনে ১৬ বছর সময় পাবেন গ্রাহক।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ ‘ঋণ পুনঃতফসিলে’ এমন নীতিমালা জারি করেছে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, যদি কোনো গ্রাহক আগেই তিনবার ঋণ পুনঃতফসিল করে থাকে তবে তাকে বিশেষ বিবেচনায় আরও একবার সুযোগ দেওয়া যাবে। চতুর্থ দফা পুনঃতফসিলের পরও গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি স্বভাবজাত বা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এর আগের মাস্টার সার্কুলারে চতুর্থবার ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের সুযোগ ছিল না। কিন্তু প্রস্তাবিত মাস্টার সার্কুলারে চতুর্থবার ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে। আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ‘কোনো ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করতে পারবে না।’ বলা হয়েছিল, তৃতীয় দফা পুনঃতফসিলের পরও গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি স্বভাবজাত বা ইচ্ছাকৃত খেলাপি বিবেচিত হবেন। নতুন নির্দেশনা মতে, এখন থেকে চারবারের বেশি পুনঃতফসিল করতে পারবে না গ্রাহক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় ‘ঋণ পুনঃতফসিলে ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে বকেয়া ঋণ স্থিতির ৪ শতাংশ বা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির যথাক্রমে ৭ শতাংশের যে অঙ্ক কম। আগে ছিল ১৫ শতাংশ। পুনঃতফসিলকৃত এই ঋণ পরিশোধে সময় দেওয়া হয়েছে ছয় বছর। অর্থাৎ ঋণ পুনঃতফসিলে এখন আর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হবে না। স্বল্প অর্থে ঋণ নবায়নের সুযোগ করে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দ্বিতীয় দফায় পুনঃতফসিলের জন্য গুনতে হবে মোট ঋণের ৫ শতাংশ বা বকেয়া কিস্তির ৮ শতাংশের মধ্যে যেটা কম সে পরিমাণ অর্থ। আগে যা ছিল ২০ শতাংশ। এর জন্য পাঁচ বছর সময় পাবেন গ্রাহক।
তৃতীয় ও সবশেষবারের জন্য রাখা হয়েছে ৬ শতাংশে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ। অথবা বকেয়া কিস্তির ৯ শতাংশ। আগে যা ছিল ঋণের ৫০ শতাংশ। তৃতীয়বার পুনঃতফসিল করেও সেই ঋণ শোধ করার জন্য আরও পাঁচ বছর সময় পাবেন গ্রাহক। সুতরাং তিনবার পুনঃতফসিল করলে সামষ্টিকভাবে ১৬ বছর সময় পাবেন বকেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, প্রকৃত আদায় ছাড়া পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা ঋণের বিপরীতে কোনো অর্থ আয় খাতে নেওয়া যাবে না। আধিগ্রহণ করা ঋণের ক্ষেত্রে আগের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনকে বিবেচনায় নিতে হবে, যা সর্বোচ্চ চার বার হিসাবয়নের ক্ষেত্রে গণনায় নিতে হবে। জাল-জালিয়াতির ঋণ এই নীতিমালার আওতায় পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে না। গ্রাহকের অস্তিত্ব, ঋণের সদ্ব্যবহার, জামানত ইত্যাদি যাচাই কওে নথিতে রাখতে হবে।
একইভাবে পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করার জন্য নির্দিষ্ট ছকে তথ্য নিতে হবে এবং পরিদর্শনের সুবিধার্থে নথিতে সংরক্ষণ করতে হবে। পুনঃতফসিল করার সময় কস্ট অব ফান্ড কাভার না করে কোনো সুদ মওকুফ করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের সময় নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পুনঃতফসিল হলে পরিদর্শন দল তা বাতিল করতে পারবে।
এসআই/জেডএস