‘যিনি বড় পাঙাশ কিনতেন তিনিও এখন খোঁজেন ছোট পাঙাশ’
মহাখালীর কাঁচাবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মাছ বিক্রি করেন মনিরুল ইসলাম। মাছের দাম ইদানিং বেশি হওয়ায় ব্যবসা আগের চেয়ে কমে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, বিক্রি কম হচ্ছে। আগে যে মানুষ এক দেড় কেজি কই মাছ কিনতেন তিনি এখন আধা কেজি মাছ কিনেন। যেই ক্রেতা আগে বড় পাঙাশ মাছ কিনতো তিনি এখন ছোট পাঙাশ খোঁজেন। এভাবে আগের চেয়ে ক্রেতা কমেছে খুচরা বাজারে।
গত ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া মাছের দাম আর কমেনি। নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদার শীর্ষে থাকা তেলাপিয়া, পাঙাশ আর চাষের কই মাছের দামও বেড়েছে অনেক। যে কই মাছ কিছু দিন আগেও ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ছিলো এখন তা ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঙ্গাশ মাছ আর তেলাপিয়া মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতারা বলছে, মাছের খাবারের দাম বেশি সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এসব কারণে মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে ফলে ক্রেতাও আগের চেয়ে কমেছে অনেক।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাজধানী বিভিন্ন খুচরা মাছের বাজার ঘুরে বাড়তি দামের বিষয়টি জানা গেছে। ক্রেতারাও আগের চেয়ে পরিমাণে কম মাছ কিনছেন বলে জানিয়েছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের কই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, রুই মাছ ৩২০ থেকে ৩০০ টাকায়, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, ইলিশ ছোট সাইজেরটা ৮০০ টাকা, মাঝারি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং বড় সাইজেরগুলো ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সেই চড়া ভাবই রয়েছে শাকসবজির বাজারে
অন্যদিকে বড় কাতল মাছ ৩৮০ টাকা কেজি, বড় পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, ট্যাংড়া ৭০০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আর মাগুর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগের স্থানীয় খুচরা মাছ বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রতিটি মাছের দাম বাড়তি, যেই মাছেরই দাম করি সেটারই ঊর্ধ্বগতি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পাঙাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছের দাম আগে তুলনামূলক কম ছিল এখন সেইসব মাছেরও দাম বেড়েছে অনেক। যা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। ভালো মাছ তো শখ করেও কিনতে পারি না দাম বৃদ্ধির কারণে। এখন এসব কম দামের মাছের দামও বেড়ে গেছে। আগে এককেজি কই মাছ কিনেছি এখন দাম বাড়তির কারণে আধা কেজি কিনে নিয়ে যাই। আবার বাজারে গেলে ছোট পাঙাস খুঁজে নেই। এছাড়া আমার মতো অনেকে বাজারে এসে মাছ কিনতে না পেরে সবজি, ডিম কিনে বাড়ি ফিরে। বাজার ঘুরে দেখা যায় মাছের বাজারে সাধারণ নিম্ন আয়ের ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে, বাড়তি দামের কারণে তারা অনেকেই মাছ কিনতে পারে না।
রাজধানীর গুলশান লেকপাড় সংলগ্ন একটি মাছের বাজারের বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, বাজারে মাছের দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতা কমে গেছে। আগে যদি সারাদিনে যেখানে ৪০/৫০ কেজি কই মাছ বিক্রি করেছি সেখানে এখন সেই পরিমাণ অনেক কমে গেছে। আগে যে মানুষ দুই কেজি মাছ নিয়েছে সেই ক্রেতাই এখন এক কেজি মাছ নেয়। বাজারে আগে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হত তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কই, রুই মাছ। সেগুলো এখন আগের মতো তেমন বেশি বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ বাড়তি দামে মাছ কেনা কমিয়ে দিয়েছে, ক্রেতাও কমেছে আগের চেয়ে।
আরও পড়ুন: এক ডাব ১৫০!
মাছের বাড়তি দামের কারণ জানিয়ে মহাখালীর মাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতা বাবুল আহমেদ বলেন, মাছের খাবারের দাম বাড়ার কারণে মাছ চাষীদের খরচ বেশি হচ্ছে। সেইসঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় মাছ পরিবহন করতে গাড়ি খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। এর জন্য দামের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আমরা যখন পাইকারি বাজারে, আড়তে মাছ কিনতে যাই তখন আমাদেরও কিনতে দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে। এরপর সেই মাছ আমারা পরিবহন করে খুচরা বাজারে আনতে আবার একটা বাড়তি পরিবহন খরচ পড়ছে। সব মিলিয়ে মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে সব বাজারেই। তবে এটাও ঠিক মাছের দাম বাড়ায় আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে কমে গেছে।
এএসএস/এমএ