ডলার লেনদেনের জন্য ২৩ ব্যাংক চায় ৬৬৬ শাখা
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য নতুন করে ৬৬৬টি অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখার আবেদন করেছে ২৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সংকট কাটাতে শাখায় শাখায় ডলার বেচাকেনা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো।
রোববার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বর্তমান নিয়মে শুধুমাত্র বৈদেশিক লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাংকের এডি শাখাগুলো থেকে নগদ ডলার কেনাবেচনার অনুমতি রয়েছে। ডলার সংকট মোকাবিলা ও মানি চেঞ্জারের দৌরাত্ম্য কামাতে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় সেবার পরিধি বাড়াতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কোন এলাকার কোন শাখায় এ ধরনের সেবা চালু করা যায়, এর একটি তালিকা ব্যাংকগুলো কাছে চাওয়া হয়। নতুন এডি শাখা নেওয়ার জন্য আবেদনের শেষ সময় ছিল ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে ২৩টি ব্যাংক ৬৬৬টি নতুন এডি শাখার জন্য আবেদন করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ডলার বেচাকেনার জন্য শুধুমাত্র ২০০ অনুমোদিত ডিলার বা এডি শাখা ও ২৩৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। জানা গেছে, ডলার বেচাকেনার জন্য সারাদেশে এডি শাখার সংখ্যা খুব একটা নেই। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরেই বেশিরভাগ শাখা। ফলে নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি পর্যটকসহ সাধারণ গ্রাহকদের।
এ ছাড়া ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে এনডোর্সমেন্ট বাধ্যতামূলক হলেও খোলাবাজারে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো নগদ ডলারের বাজার একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। ডলারের বাজারে চলমান অস্থিরতার পেছনেও মানিচেঞ্জারগুলো দায়ী বলেও মনে করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে মানি চেঞ্জারগুলোর ওপর নগদ ডলার বেচাকেনার নির্ভরতা কমাতে ব্যাংকের এডি শাখার বাইরে অন্যান্য শাখায়ও নগদ ডলারসহ অন্য বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে শাখাগুলোতে একটি ডেস্কের মাধ্যমেই এ সেবা চালুর অনুমোদন দেওয়া হবে।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুত করে কয়েকটি ব্যাংক হাতিয়ে নিয়েছে বড় অঙ্কের মুনাফা। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে। এমন তালিকায় ১২টি ব্যাংক রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ডলার নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগে ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে অন্য ব্যাংকগুলোকেও চিঠি দেওয়া হবে।
এর আগে, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এ ছাড়া, ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। কারসাজির অপরাধে কিছু মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করাসহ বেশ কটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়েছে।
শোকজের যথাযথ উত্তর দিতে পারলে এসব মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। অভিযানে আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়ে এতদিন ব্যবসা করে আসছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিগত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত বছর আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
এসআই/আরএইচ