ডিমের হালি ৫৫ টাকা, এত দামে কিনব কীভাবে?
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে ১৫ বছরে ধরে চাকরি করছেন তপন সাহা। রাজধানীর দক্ষিণ শাহাজাদপুর এলাকায় এক রুমের একটি বাসায় সাত মাসের গর্ভবতী স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন।
প্রতিদিন একটি সেদ্ধ ডিম গর্ভবতী স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলের খাবারের তালিকায় রাখার চেষ্টা করেন তপন। কিন্তু গত কয়েক দিনে কয়েক দফায় ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্ত্রী ও সন্তানের খাবার তালিকায় প্রতিদিন আর ডিম রাখতে পারছেন না।
ডিমের আকাশচুম্বী দামের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তপন সাহা। তিনি বলেন, আমরা খুবই স্বল্প আয়ের মানুষ। কোনো মতে একটি রুম ভাড়া নিয়ে এই শহরে থাকি। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন আমাদের মতো মানুষের নাগালের বাইরে। তবু শত কষ্ট হলেও চেষ্টা করেছি গর্ভবতী স্ত্রী ও তিন বছরের বাচ্চাকে দিনে অন্তত একটি করে সেদ্ধ ডিম খাওয়াতে। কিন্তু এখন ডিমের বাজারেও আগুন। ৫৫ টাকা হালিতে ডিম কেনা আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
শুধু তপন সাহা নয়, তার মতো অনেকেই অতিরিক্ত দামের কারণে খাদ্য তালিকা থেকে ডিম বাদ দিয়েছেন। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় গত পাঁচ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন আব্দুল আজিজ।
ডিমের অতিরিক্ত দাম নিয়ে আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের মতো দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের কপালে মাছ-মাংস জুটে না অনেক আগে থেকেই৷ ডিমই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। অল্প দামে এক হালি ডিম কিনে অর্ধেক করে চার জন মানুষের খাবারটা কোনো মতে হয়ে যেত। এখন ডিমও আমাদের কপাল থেকে উঠেছে। সারা দিন কয় টাকা আয় করি যে ৫৫ টাকা হালি ডিম কিনতে পারব।
আরও পড়ুন: ডিমের দাম নির্ধারণ করে সিন্ডিকেট, জিম্মি ভোক্তা-খামারি
সোমবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শাহাজাদপুর কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে প্রতি হালি লাল ডিম ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ডজন হিসাবে লাল ডিম ১৫৫ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়।
শাহাজাদপুরের ডিম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও লাভ কমে গেছে। আগে একজন ক্রেতা যেখানে এক ডজন ডিম কিনতেন সেখানে এখন এক হালি করে কিনছেন। ফলে তাদের ডিম কেনাবেচা অনেক কমে গেছে।
দক্ষিণ শাহজাদপুরের মুদির দোকানি মাইনুদ্দিন বলেন, ডিমের মূল্যবৃদ্ধির আগে যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ কেস ডিম বিক্রি হতো, সেখানে এখন চার থেকে পাঁচ কেস বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ভাবতে পারে যে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের লাভ বেশি হচ্ছে। আসলে পরিস্থিতি উল্টো। দাম বাড়ায় মানুষজন ডিম কেনা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বিক্রি কম হচ্ছে, আমাদের লোকসান হচ্ছে।
বাড্ডার ডিম বিক্রেতা মো. আয়নাল হোসেন বলেন, ডিমের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পুঁজি খাটাতে হচ্ছে ব্যবসায়। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের লাভ হচ্ছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ার কারণে নাকি খামারিরা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ডিমের দাম বেড়েছে। আর ডিমের দাম বেড়ে যায় আমাদেরও পাইকারিতে বেশি টাকা দিয়ে ডিম কিনে আনতে হচ্ছে। এতে আমাদেরও লাভ কমে গেছে, কারণ বিক্রি কমে গেছে।
এমএসি/এসএসএইচ