পরিবহন খরচের তেজ সবজির বাজারে
‘পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তরকারির দাম এত বেড়েছে যে, আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগে পুরো একটা মিষ্টি কুমড়া কিনতাম, আজ কিনলাম অর্ধেক। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো আয়ের মানুষের পক্ষে তিন বেলা খাবার খাওয়া কষ্ট হয়ে যাবে। আগে তিন বেলা খেতাম, এখন হয়তো দুই বেলা খেতে হবে।’
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আক্ষেপ করেই ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন এক দম্পতি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কমের মধ্যে আছে শুধু পেঁপের দাম। এক কেজি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই সবজি। এছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে অনেক ক্রেতাই কম বাজার নিয়ে বাসায় গেছেন।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, কম দামে কিনলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারি। ক্রেতাদের সঙ্গে দামদর করতে হয় কম। কিন্তু দাম বাড়ায় অনেক বেশি দামদর করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত তিনদিনে বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে লেবু, পটল ও করলা অন্যতম।
লেবুর দাম কয়েকদিন আগেও যেখানে ডজন ছিল ৩০ টাকা, সেখানে আজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
কেন দাম এত বাড়ল জানতে চাইলে বিক্রেতা রহিম মিয়া বলেন, এক সপ্তাহ আগে লেবুর ডজন বিক্রি করেছি ৩০ টাকায়। অথচ এখন ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, আগে বস্তা কিনতাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। আর এখন কিনতে হচ্ছে ২১০০ টাকায়।
তিনি বলেন, কাঁচা কলার হালি কিনেছি ৮ টাকায়, এখন কিনছি ১২ টাকায়। বাংলাদেশে কোনো কিছুর দাম এক টাকা বাড়লে আমরা দেড় টাকা বাড়িয়ে দেই, কিন্তু এক টাকা কমলে আর কমাই না।
ব্যবসায়ীরা জানান, পটলের দাম আজকে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। আমদানি কম থাকায় ২০ টাকা কেজির পটল সপ্তাহ ঘোরার আগেই ৪০ টাকা হয়ে গেছে।
সবজি বিক্রেতা আলিম হোসেন বলেন, তেলের দাম বাড়ায় সবজির দাম বেড়ে গেছে। পটলের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা ছিল দুয়েকদিন আগেও। আর আজকে দাম ৪০ টাকা। অন্য সব সবজির দামও বাড়তি।
করলার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। সবজি বিক্রেতা মো. ফারুক বলেন, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে, এতে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১৫-২০ টাকা দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, তিনদিন আগে করলার দাম কেজিতে ছিল ৩০-৪০ টাকা। আজ সে করলা ৫০-৬০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এ সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজির দাম বাড়ায় আমাদেরও কষ্ট অনেক বেড়ে গেছে। সবজি কিনতে চালান লাগছে বেশি। ক্রেতাদের সঙ্গে দামদর করতে হচ্ছে বেশি। দাম কম থাকলে তো এসব সমস্যা হতো না।
এদিকে দাম বাড়ায় আগের চেয়ে কম পরিমাণ সবজি কিনছেন অনেক ক্রেতাই। তেমনই একজন টুরিস্ট কোম্পানির চাকরিজীবী বাবুল হোসেন।
তিনি বলেন, বাজারে সবজির দাম বাড়তি। এটা আমাদের ক্রয়ের পরিমাণে প্রভাব ফেলেছে। আগে বাজারে এলে সব ধরণের সবজি এক কেজি করে দিতে বলতাম। এখন বাছাই করে ৩ বা ৪টি আইটেম নিতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে হাইব্রিড পেয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়, ভারতীয় পেয়াজ ১৮০ টাকায় আর দেশি পেয়াজ ২৪০ টাকায়। অথচ কয়েকদিন আগেও ২২০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ এবং অন্যগুলোও ১০-২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এখন পাল্লায় ১০ থেকে ২০ টাকা এবং কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।
খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় আর ভারতীয় ৪০ টাকায়।
আলুর দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে। ১৩০ টাকা ছিল পাল্লা (৫ কেজি)। ১০ টাকা কমে এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
খুচরা বাজারে দেশি আদা কেজি ১০০ টাকা এবং ভারতীয় ১১০ টাকা; চায়না রসুন ১২০ ও ১৪০ টাকা এবং দেশি রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
এছাড়া দাম বাড়ায় পর কচুর লতি ৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ধুন্দল ৪০-৫০ টাকা, কচুমুখী ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এএজে/আইএসএইচ