ভয়ে জ্বালানি খাতের শেয়ার বেচে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা
লোডশেডিংয়ের পর জ্বালানির মজুত শেষ হয়ে আসছে—এমন শঙ্কায় ধস নেমেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শেয়ারে। বুধবার (২৭ জুলাই) শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ খাতে শেয়ার বিক্রির হিড়িক ছিল। এ খাতে লেনদেন করা ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দামই কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার জ্বালানি খাতের শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা থেকে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত কমেছে। অর্থাৎ এদিনে সার্কিট ব্রেকারে সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশের কাছাকাছি কমে যায় বেশিরভাগ শেয়ারের দাম।
সরকারি-বেসরকারি কিংবা লাভ-লোকসানে থাকা— যাই হোক না কেন, সব শেয়ারের দাম কমে। এ খাতের দেখাদেখি অন্যান্য খাতের শেয়ারেও দরপতন হয়। ফলে সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণা করেছিল। এ ইস্যুতে প্রথম কদিন এ খাতের শেয়ারের দাম কমে। তবে গত দুদিন সোম ও মঙ্গলবার সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু মঙ্গলবার দিনশেষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জ্বালানির মজুত নিয়ে খবর প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডলারের দাম বেশি থাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে জ্বালানি তেলের অর্ডার দিতে পারছে না। ফলে বিনিয়োগকারীদের ভয় সৃষ্টি হয়েছে যে, কোম্পানিগুলো ব্যবসা হারাবে। লাভের পরিবর্তে লোকসানে পড়বে। এ কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জ্বালানি ও ডলারের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর হাতে জ্বালানি তেলের মজুত কমেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। তেল মজুতকে কেন্দ্র করে নানা গুজব ছাড়ানো হয়েছে বাজারে, তাতে ভয়ে শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ব্লেন্ডারস লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা, যা শতাংশের হিসাবে ২ শতাংশ। অর্থাৎ সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে। বুধবার দিনের শুরুতে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৮৭৯ টাকা ১০ পয়সা। শেষ সময়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৪১ টাকা ৬০ পয়সায়।
লোকসানে থাকা জ্বালানি তেল পরিশোধনের বেসরকারি কোম্পানি সিভিও পেট্রো-কেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ২ শতাংশ বা ৩ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ ১৬২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে এ কোম্পানির শেয়ার। দিনের শুরুতে লেনদেন হয়েছিল ১৬৫ টাকা ৪০ পয়সায়।
অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ৭০ পয়সা। দিনের শুরুতে লেনদেন হয়েছিল ৩৭ টাকা ১০ পয়সায়। আর শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সায়।
বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ারের দর ছিল ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ৪০ পয়সা। আজ দিনের শুরুতে শেয়ারটির লেনদেন হয় ২১ টাকা ৫০ পয়সায়। আর শেষে লেনদেন হয় ২১ টাকা ১০ পয়সায়।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বা ৫০ পয়সা। বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডের দাম কমেছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৪০ পয়সা কমেছে।
ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) দাম কমেছে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ ৬০ পয়সা দাম কমেছে।
ডোরেন পাওয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ১ টাকা ৩০ পয়সা। ইউনাইটেড পাওয়ারের দর ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ৪ টাকা ৮০ পয়সা কমে সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ২৪৩ টাকা ৫০ পয়সায়।
ইউনাইটেড পাওয়ারে শেয়ারের দাম দশমিক ৬০ শতাংশ বা ১ টাকা ৪০ পয়সা কমে লেনদেন হয়েছে ২৩৩ টাকা ১০ পয়সায়।
শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ১ টাকা ৩০ পয়সা কমে ৬৭ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। জিবিবি পাওয়ারের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বা ৩০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৬০ পয়সায়।
সামিট পাওয়ারের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বা ৪০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায়। খুলনা পাওয়ারের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ৪০ পয়সা কমেছে। আজ সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ২০ পয়সায়।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা ১ টাকা কমে ৫২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন শেষ করেছে। বিদ্যুৎসামগ্রী তৈরির প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ ৬০ পয়সা কমে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৪ টাকা ১০ পয়সায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়ামের দাম ১ দশমিক ২০ শতাংশ বা ২ টাকা ৪০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯৮ টাকা ৩০ পয়সায়। পদ্মা অয়েল কোম্পানির দাম দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ১ টাকা ৬০ পয়সা কমে হয়েছে ২০৮ টাকা ২০ পয়সা। যমুনা অয়েলের শেয়ারের দাম দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ১০ পয়সা কমেছে।
বেসরকারি কোম্পানি লুব-রেফ বাংলাদেশের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বা ৭০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এমজেএল বাংলাদেশের শেয়ার দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৭০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭ টাকায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর হারিয়েছে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বা ৮০ পয়সা। সবশেষ দাম দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ৪০ পয়সায়।
এ ছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ারের দাম দশমিক ৪৫ শতাংশ বা ৬ টাকা ৩০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।
এমআই/আরএইচ