খোলা বাজারে ফের ডলারের সেঞ্চুরি
ডলারের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। পতন হচ্ছে টাকার মান। কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দাম আবারও ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রোববার (১৭ জুলাই) বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০০ টাকা ৪০ পয়সা দিতে হয়েছে। এর আগে গত ১৭ মে খোলা বাজারেডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠেছিল। ব্যাংকগুলোতেও নগদ ডলার ৯৭ টাকা থেকে ৯৮ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের ১৩ জুলাই প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল। এক মাস আগে ১৬ জুন লেগেছিল ৯২ টাকা ৮০ পয়সা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দুই-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এ বছরের ৯ জানুয়ারিতে এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরও ২৫ পয়সা। ১৬ মে বাড়ে ৮০ পয়সা। ২৩ মে বাড়ে ৪০ পয়সা।
ফলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায়। এর পর গত ৩১ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৪ জুন হয় ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। ৫ জুন হয় ৯১ টাকা ৫০ পয়সা ৬ জুন দাঁড়ায় ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। ৭ জুন ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৯২ টাকায়। এরপর ৮ জুন কমে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা হয়। পরদিন ৯ জুন আবার ৯২ টাকা হয়। ১৩ জুন ৯২ টাকা ৫০ পয়সায় এবং ২৩ জুন হয় ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা, ২৮ জুন হয় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা।
এদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে আমেরিকান ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবুও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডলারের বাজার।
বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়।
এর ফলে গত ১২ জুলাই বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
এসআই/এসকেডি