নগদ ডলার ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই
ডলারের সংকট বেড়েই চলছে। দিন দিন বাড়ছে দাম, কমছে টাকার মান। কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দাম আবারও ১০০ টাকার কাছাকাছি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ৯৮ টাকা ৬৫ পয়সা থেকে ৯৯ টাকা ৬০ পয়সা খরচ হয়েছে। আগের দিন ৯৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৯৮ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছিল।
খুচরা ডলার ব্যবসায়ী আল আমিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তীব্র সংকট চলছে। সে কারণেই প্রতিদিনই দর বাড়তির দিকে।
মতিঝিল সুগন্ধা মানি এক্সচেঞ্জের এক কর্মকর্তা জানান, আজ ডলার ৯৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছি। আর কেউ আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করতে এলে রেট দিচ্ছি ৯৯ টাকা।
ব্যাংকগুলোতেও নগদ ডলার ৯৬ টাকা থেকে ৯৮ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে, চলতি বছরের ১৭ মে খোলা বাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেদিন বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০১ টাকা দিতে হয়।
সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করা হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আজ আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা দরে মোট ১৩৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন : ডলারের দাম বাড়ল আরও ৫০ পয়সা
এদিকে, দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৯৭ কোটিতে নেমে এসেছে।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে আজ খরচ হয়েছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা। মানে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এ দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। দুদিন আগেও এক ডলার বিক্রি হয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায়। মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। এ হিসাবে মের মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমল সাড়ে ৭ টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দুই-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এ বছরের ৯ জানুয়ারিতে এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরও ২৫ পয়সা। ১৬ মে বাড়ে ৮০ পয়সা। ২৩ মে বাড়ে ৪০ পয়সা।
ফলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায়। এর পর গত ৩১ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৪ জুন হয় ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। ৫ জুন হয় ৯১ টাকা ৫০ পয়সা ৬ জুন দাঁড়ায় ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। ৭ জুন ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৯২ টাকায়। এরপর ৮ জুন কমে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা হয়। পরদিন ৯ জুন আবার ৯২ টাকা হয়। ১৩ জুন ৯২ টাকা ৫০ পয়সায় এবং ২৩ জুন হয় ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা, ২৮ জুন হয় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। আজ (১৪ জুলাই) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঠেকল ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সায়।
এসআই/আইএসএইচ