৭ শতাংশ কর দিয়েও পাচার হওয়া অর্থ দেশে আসার সম্ভাবনা কম
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। ব্র্যাক বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ফোরাম শনিবার (১১ জুন) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
‘পোস্ট বাজেট ডায়ালগ ফিসক্যাল ইয়ার ২০২২-২৩’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে অংশ নেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং আইপিডিসি ফিন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মোমিনুল ইসলাম।
সভায় আলোচকরা এবারের বাজেটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রণীত বাজেট হিসেবে উল্লেখ করেন। এ বাজেটে ইতিবাচক অনেক কিছু রয়েছে। তবে বাজেট বাস্তবায়ন করাটাই সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন আলোচকরা।
ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সার্বিকভাবে বাজেটে যে সব টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোকে আমি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, আমার কাছে এটি বস্তুনিষ্ঠ বলে হয় না।
বাজেট ঘাটতি নিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, এটি গ্রহণযোগ্য। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশ ধরলেও আমার তাতে আপত্তি থাকত না।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ পণ্য সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়েছে। সে কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ব্যয় বাড়ানো দরকার ও প্রকৃত দরিদ্ররাই যাতে এর সুফল ভোগ করতে পারেন এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে আয় বৈষম্য ও আঞ্চলিক বৈষম্য বেড়েছে বলে জানান ড. মির্জ্জা আজিজ। তিনি বলেন, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অনেক কম। আঞ্চলিক বৈষম্য না কমাতে পারলে জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
আইপিডিসি ফিন্যান্সের সিইও মোমিনুল ইসলাম বলেন, ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার সুযোগ দিলেও খুব বেশি অর্থ দেশে আসার সম্ভাবনা কম। ১৭টি দেশ সাম্প্রতিক সময়ে একই চেষ্টা করেছে, কোনো দেশই খুব ভালোভাবে সফল হয়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে টিউশন ফির ক্ষেত্রে ভ্যাট দিতে হবে, এখন এগুলোকে ইনকাম ট্যাক্সের আওতায় আনা হচ্ছে। এটি চিন্তার একটা বিষয়। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি মুনাফা নির্ভর হয়ে যেতে পারে। নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো যেতে পারে।
আলোচনা সভা শেষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের করা বাজেট বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদরা। এ সময় ল্যাপটপ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ট্যাক্স প্রত্যাহারে বিষয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সের চেয়ারপারসন এএফএম ইউসুফ হায়দার। বাজেটবিষয়ক সংলাপটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক শামীম এহসানুল হক।
এএজে/আরএইচ