পুঁজিবাজার থেকে উধাও আরও চার হাজার কোটি টাকা
• লেনদেন বেড়েছে ৮ শতাংশ
• চার সপ্তাহে পুঁজি উধাও ২৫ হাজার কোটি টাকা
• আরও পতনের আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা
চারদিন পতন আর একদিন সূচকের বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে (১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি সময়ের) আরও একটি সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজিবাজার। তাতে সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন উধাও হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা।
এর ফলে টানা চার সপ্তাহ পুঁজিবাজারে দরপতন হলো। এই দরপতনের ফলে ২৫ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এর মধ্যে সর্বশেষ দুই সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা সাড়ে ১৩ হাজার কোটি এবং প্রথম দুই সপ্তাহে ১৪ হাজার কোটি টাকার পুঁজি উধাও হয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে গত সপ্তাহের প্রথমদিন বোরবার বড় দরপতন হয়। তবে দ্বিতীয় দিন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপে বাজারকে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়।
তারপর বাকি তিনদিন টানা দরপতন হয়েছে। তারা বলছেন, পতনের ধারা অব্যহত থাকায় আরও পতনের শঙ্কা কাজ করছে বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দেখা-দেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করেছেন।
তাই বাজারের দরপতন অব্যাহত ছিল। এই অবস্থা থেকে উত্তোলনে গুজবে কান না দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানিতে জেনে-বুঝে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে ৩৭০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৭টির, দাম কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। তার আগের সপ্তাহে দাম বেড়েছিল ২৪টির, দাম কমেছিল ২৫২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়লেও ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০৫ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
পুঁজি কমার এ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৫৭ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন। এর আগের সপ্তাহে তারা ৪ হাজার ৮৬ কোটি ১২ লাখ ৬৪ হাজার ১৮০ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন। তাতে সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বাড়ে ৩৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, যা শতাংশের হিসাবে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বাড়ার শীর্ষে ছিল- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, লিব্রাইনফিউশন, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, আনলিমা ইয়ার্ন, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, ফরচুন সু, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও এক্টিভফাইন কোম্পানি লিমিটেড।
লেনদেনের শীর্ষে ছিল- বেক্সিমকো, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, বেক্সিমকো ফার্মা, রবি আজিয়াটা, লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজ, স্কয়ার ফার্মা, সামিট পাওয়ার, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ফাইনেন্সে অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, এবং বিকন ফার্মা লিমিটেড।
এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ১৬৯ কোটি ৪৫ লাখ ২১ হাজার ৫৬ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৪৭ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৯২ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বাড়ে ৯০টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ১৩০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৫টির। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর প্রধান সূচক ৬২ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৮২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এমআই/এনএফ