কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে লাইসেন্স দিল বেজা
দেশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর মাধ্যমে দেশের ১২তম বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পেল কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতাধীন কুমিল্লা ইকোনমিক জোনকে চূড়ান্তভাবে এ লাইসেন্স দেওয়া হলো।
রোববার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অন্যান্যের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি আধুনিক, দ্রুত এবং মানসম্মত সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেজার কার্যক্রমের ফলে করোনাকালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের কাছে বিস্ময় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সংস্থাটি সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে শিল্পায়নের ধারা বজায় রাখবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন মেঘনা গ্রুপকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে হওয়ায় কুমিল্লা ইকোনমিক জোন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাবে। কুমিল্লা ইকোনমিক জোনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ জমি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
তিনি বলেন, এই ইকোনমিক জোন বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা সম্ভব হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করেন সরকারের সব আইন ও নীতি প্রতিপালন করে তারা যেন পরিকল্পিত শিল্প স্থাপন করেন। শুধুমাত্র কর অবকাশ বা ইনসেন্টিভ প্যাকেজের কথা চিন্তা না করে বৃহত্তর স্বার্থে সব বিনিয়োগের জন্য সুযোগ সৃষ্টির প্রতি তিনি গুরুত্ব দেন।
কুমিল্লা ইকোনমিক জোনের কর্নধার মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্য প্রস্তুতিতে মেঘনা গ্রুপ সুনামের সঙ্গে কাজ করে এসেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান দেশ এবং দেশের বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে প্রায় ২৫০ একর এলাকাজুড়ে কুমিল্লা ইকোনমিক জোনের অবস্থান। যা পরে ৩৫০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের উদ্যোক্তা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রস্তাবিত জোনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জোন হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিক এলাকা, পানি ও বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও সবুজায়ন, স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। পরিবেশের উপর যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পরে তার জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, কুমিল্লা জোনে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে কুমিল্লা ইকোনমিক জোন লিমিটেড। জোনটির সফল বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেজার চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রাপ্ত বিভিন্ন বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে এবং ২৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ৩৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ এবং খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন থেকে প্রস্তুত করা হচ্ছে জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল।
এসআর/জেডএস