এবারে বাজেটে কেউ হারবে না, সবাই জিতবে
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের এমন বাজেট করা হবে, যেখানে কেউ হারবে না। সবাই জিতবেন। সাথে সরকারও জিতবে। রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে বাজেটে ব্যবসায়ীদের কষ্ট লাঘবের চিন্তা থাকবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এফবিসিসিআই-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শ কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার সব নিয়ে নিচ্ছে, ব্যবসায়ীরা কিছুই পাচ্ছে না এমন অভিযোগ শুনতে চাই না। তবে জাতির স্বার্থে, নিজের স্বার্থে, সোনার বাংলা গঠনে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে সবাইকে কর দিতে হবে। কর না দিলে সরকার মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের করনীতি সারাবিশ্বের কাছে সমাদৃত হবে। যতোটা সম্ভব প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে চাই। একইসঙ্গে পরোক্ষ কর কমানোর চেষ্টা করছি। রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে বাজেটে ব্যবসায়ীদের কষ্ট লাঘবের চিন্তা থাকবে। এ সরকারের আমলে আগে কেউ ঠকেনি, ভবিষ্যতেও কেউ ঠকবে না। কারণ ব্যবসায়ীরা ঠকলে দেশকে এগুনো যাবে না।
কর আদায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১৩ বছরে রাজস্ব আদায় ৮ গুণ বেড়েছে। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের অবদান আছে। এনবিআর চেয়ারম্যান ও তার টিমের অবদান আছে। তবে গত ২ বছরে করোনার কারণে পিছিয়ে গেছি। সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
কর কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয় ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, ঘুষ দেবেন না। যারা ঘুষ দেয় এবং নেয়, তাদের জায়গা হবে জাহান্নামে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, দেশকে উন্নত করতে চাইলে শিল্পায়নের বিকল্প নেই। এনবিআর শিল্পায়নের স্বার্থে পলিসি করার চেষ্টা করছে। গত ২ বছরে কর্পোরেট কর হ্রাস সেটিই প্রমাণ করে। তারপরও কীভাবে রাজস্ব আদায়ের পথ রুদ্ধ না করে শিল্পায়নকে সহযোগিতা করা যায় সে জন্য এনবিআর কাজ করছে। এ জন্য কর জাল বাড়িয়ে, কর হার কমানোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সেবার মান ও বিতর্কের অবসান করতে কর্মকর্তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি ও অটোমেশনে জোর দেওয়া হয়েছে।
ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, অল্পকিছু বিপথগামী শুল্ক-কর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর জন্য রাজস্ব বিভাগের বদনাম হয়। আমরা উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব চাই। সমালোচনা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
মুক্ত আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম বলেন, মাটি ও বালু ছাড়া নির্মাণ খাতের সব উপকরণই আমদানি নির্ভর। আগে দেশে পাথর পাওয়া গেলেও নানা কারণে এখন সেটিও আমদানি করতে হচ্ছে। তার ওপর বর্তমানে রড, সিমেন্টের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে বাজেটে নির্মাণ খাতকে সহায়তা না করা হলে সরকারি অনেক প্রকল্প ও আবাসন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, দেশের স্টিল শিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্টিলের কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হলে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আনা যাবে।
বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, ঝুট বিক্রি ও সাব-কন্ট্রাক্টিং আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর আদায় করা হচ্ছে, যা বৈষম্যমূলক। এটিও নিয়মিত কর হারের মতো হওয়া উচিত। এছাড়া রপ্তানির উৎসে কর আগামী ৫ বছরের জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বহাল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
আরএম/এনএফ