গার্মেন্টসের পর বৃহৎ রপ্তানি শিল্প হবে সোনা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম বাংলাদেশ জুয়েলারি এক্সপো ২০২২ শুরু হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যোগ দিতে এ মেলার আয়োজন করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। জুয়েলারি এক্সপোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল্য ছাড়সহ আকর্ষণীয় অফারের ছড়াছড়িতে প্রথম দিনেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নামে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ১৯ মার্চ পর্যন্ত। বাংলাদেশ জুয়েলারি এক্সপো-২০২২ উদ্বোধন করেন দেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলায় সবার জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ উন্মুক্ত থাকবে। দর্শনার্থীদের জন্য র্যাফেল ড্রতে নগদ ১০ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার, ৫ লাখ টাকার দ্বিতীয় পুরস্কার ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে পরবর্তী ১০ জনের জন্য রয়েছে ১ লাখ টাকা করে ১০টি পুরস্কার।
মেলায় সাংবাদিকদের জন্য থাকবে আলাদা র্যাফেল ড্র। তিন দিনের এ এক্সপোতে দুই লাখেরও বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। এক্সপোতে মোট ৬৫টি স্টল রয়েছে। দেশ-বিদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা এতে অংশ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া নিত্যনতুন ডিজাইনের অলংকারের পরিচিতি ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
জুয়েলারি এক্সপোর উদ্বোধনকালে ইমদাদুল হক মিলন বলেন- আজ ঐতিহাসিক দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন। সুতরাং জুয়েলারি এক্সপোর জন্য আজকের মতো শুভ দিন আর হয় না। এ মহান দিনে জুয়েলারি শিল্পের নতুন একটি যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, গার্মেন্টসের মতোই দেশের স্বর্ণ শিল্পও বিশ্ব বাজারে জায়গা দখল করে নেওয়ার লক্ষেই কাজ করছে বাজুস।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো ভাল কিছুকে সোনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। সোনা এতই মূল্যবান। বাংলাদেশ গার্মেন্টসের পরই দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানি শিল্প হিসাবে সোনা হবে বলে বিশ্বাস করি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়। তিনি বলেন, আগামীতে এ শিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। গার্মেন্টসের পর এ শিল্প সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় করবে। সরকারকে রাজস্ব দেবে। বিদেশিরা স্বর্ণের জন্য বাংলাদেশে আসবে।
বাজুসের আরেক সাবেক সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, আমাদের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে এ এক্সপোর মাধ্যমে। তাই আজ আমাদের আনন্দের দিন।
বাজুসের প্রথম সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদ বলেন, অবহেলিত জুয়েলারি শিল্পকে আধুনিক করতে কাজ করছে বাজুস। ইতোমধ্যে বাজুসের ২৫ হাজার সদস্য থেকে ৫০ হাজার সদস্য হয়েছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে বাজুসে ৭৫ হাজার সদস্য হয়ে যাবে।
বাজুস সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের অলঙ্কার বিশ্ববিখ্যাত। বাংলাদেশে যে অলঙ্কার তৈরি হয় তার মান সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে যেতে চাই। বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোকেও আমাদের প্রদর্শনীর কেন্দ্র করতে পারে দেশের পণ্য ছড়িয়ে যাবে সব দেশে।
বাজুস সহ-সভাপতি হান্নান আজাদ বলেন, আমরা আজ আনন্দিত যে এমন একটি অনুষ্ঠান বা এক্সপোর আয়োজন করতে পেরেছি। আমাদের সংগঠনের সভাপতির নেতৃত্বের কারণে এমন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। এক সময় সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে এই সংগঠনের কার্যক্রম।
বাজুস সহ-সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, জুয়েলারি মেলার মাধ্যমে বাজুস নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। দেশের অর্থনীতিতে স্বর্ণ শিল্পের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি পাবে। স্বর্ণ খাতে বিনিয়োগ নিরাপদ। এখানে সবাই বিনিয়োগ করুন। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখবে।
বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়াল বলেন, দেশের স্বর্ণ ব্যবসাকে শিল্পে রূপান্তরিত করে রপ্তানির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।
জুয়েলারি এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাজুস সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান দুলাল, কোষাধ্যক্ষ ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান উত্তম বণিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যোগ দিতে বাজুসের এ আয়োজন। বাংলাদেশ জুয়েলারি এক্সপো ২০২২ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ এক্সপো দেশীয় অলংকার শিল্পকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশকে স্বর্ণ এবং স্বর্ণজাত শিল্প রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি শক্ত অবস্থানে নিতে অবদান রাখবে। যা জিডিপি হারকে সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হবে।
এসআই/আরএইচ