বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নেই আরও ৩ হাজার কোটি টাকা
দুদিন বড় দরপতন আর তিনদিন সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে মার্চ মাসের আরও একটি সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজিবাজার। বিদায়ী সপ্তাহে (৬ থেকে ১০ মার্চ) বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন কমেছে আরও ৩ হাজার ৩২১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮০৩ টাকা। পাশাপাশি কমেছে সূচকও।
তবে আশার দিক হলো, বড় সূচক পতনের পরও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দুটি উদ্যোগ ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর আশ্বাসে দরপতনের বৃত্ত থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। যে কারণে শেষ তিন কার্মদিবস পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচিত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ৩৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০৭টির, কমেছে ১৫৬টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছিল ৫৫টির, কমেছিল ৩১৯টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
অধিকাংশ শেয়ারের দাম বাড়লেও গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৭ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২৫ দশমিক ১১ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে।
তিনটি সূচক কমায় বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৩২১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮০৩ টাকা।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ৬ মার্চ লেনদেন শুরুর দিন ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৭ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৪ টাকা।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ১০ মার্চ লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১০৬ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৩১ টাকা। যা শতাংশের হিসাবে দশমিক ৬২ শতাংশ কম।
এর আগের সপ্তাহে মূলধন কমেছিল ১১ হাজার ৯২৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার ৩৭২ টাকা। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি ৮৯ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ তিন সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ২৬ হাজার কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯৭২ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ৬৩৪ টাকা। আগের সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২২৬ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৯ টাকা। যা শতাংশের হিসাবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৩৩৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০১৬টির, কমেছে ১১৬টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ২১টি কোম্পানির।
এ বাজারের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫৬১ পয়েন্টে। সিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ টাকার।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে শুরু হওয়া দরপতন ঠেকাতে গত মঙ্গলবার নতুন করে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে বিএসইসি। এতে বলা হয়, কোনো কোম্পানির শেয়ার একদিনে ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। যা গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পুঁজিবাজার স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বুধবার পুঁজিবাজারের পরিস্থিতিতে তারল্য সংকট দূর করতে বিএসইসি ব্যাংকগুলোর প্রধান হিসাব কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকে সিএফওরা জানান, সব ব্যাংক এখনো এক্সপোজার অনুসারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেনি। তারা কয়েকদিনের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও যেসব ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেনি, সেসব ব্যাংক দ্রুত ফান্ড গঠন করে বিনিয়োগ করবে।
এমআই/জেডএস