৯ কর্মদিবস পর পুঁজিবাজারে হাজার কোটি টাকা লেনদেন
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গৃহীত উদ্যোগ ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সিএফওদের বিনিয়োগের আশ্বাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। তাতে অব্যাহত দরপতনের পর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা তিনদিন সূচকের উত্থান হয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬১ কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার টাকার শেয়ার। এর মাধ্যমে ৯ কর্মদিবস পর আজ পুঁজিবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করল। এর আগে সর্বশেষ হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৪০ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৮ পয়েন্ট বাড়ায় মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার টাকা। এতে সর্বশেষ তিনদিনে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন অর্থাৎ পুঁজি বেড়েছে ১৩ হাজার ১৭১ কোটি ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
বুধবার ডিএসইর প্রধান সূচক ১৫৫ বাড়ায় মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার টাকায়। ৮ মার্চ (মঙ্গলবার) মূলধন বেড়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। এতে টানা তিনদিন বাড়ল ডিএসইর অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন। একই অবস্থা অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেরও (সিএসই)।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দরপতন ঠেকাতে মঙ্গলবার নতুন করে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে বিএসইসি। এতে বলা হয়, কোনো কোম্পানির শেয়ার একদিনে ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। যা বুধবার থেকে কার্যকর। পাশাপাশি বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পুঁজিবাজার স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বুধবার বর্তমান পুঁজিবাজারের পরিস্থিতিতে তারল্য সংকট দূর করতে বিএসইসি ব্যাংকগুলোর প্রধান হিসাব কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকে সিএফওরা জানান, সব ব্যাংক এখনো এক্সপোজার অনুসারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেনি। তারা কয়েকদিনের মধ্যে নূন্যতম ২ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও যেসব ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেনি, সেসব ব্যাংক দ্রুত ফান্ড গঠন করে বিনিয়োগ করবে।
এই সুখবরে বৃহস্পতিবার সূচকের তেজিভাবের মধ্যদিয়ে দিনের লেনদেন শুরু হয়। যা চলে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ, শুরু হয় সূচক পতন। যা অব্যাহত ছিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। দিনের বাকি সময় লেনদেন হয়েছে সূচকের ওঠানামার মধ্যদিয়ে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ১১টি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৪৭টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির দাম।
তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর অপর দুই সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৯ দশমিক ৫০ পয়েন্ট।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার। এরপর ছিল ফরচুন সুজ, বিডিকম, বিএসসি, জেনেক্স ইনফোসেস, ওরিয়ন ফার্মা, ইউনিয়ন ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেমস, ডিএসএসএল এবং কুইন সাউথ টেক্সটাইল লিমিটেড।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬১ দশমিক ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ৫৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে ২৮৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৭১, অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির দাম। এ বাজারে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার শেয়ার। গতকাল (বুধবার) লেনদেন হয়েছিল ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৯০ টাকার শেয়ার।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ইস্যু করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ০৭ মার্চ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হারানো পুঁজির ১৩ হাজার কোটি টাকা ফিরেছে শেষ তিন কর্মদিবসে।
এমআই/এইচকে