এক বছরে খেলাপি ঋণ বাড়ল ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা
>>পাঁচ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা
খেলাপি ঋণ কমাতে ঢালাও সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনার কারণে গেল বছরও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছিল বিশেষ সুবিধা। এত ছাড়ের মধ্যেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। হিসাব করলে যা দাঁড়ায় মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
২০২০ ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেই হিসাবে এক বছরের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ওই গ্রাহককে খেলাপি করা হয়নি। ফলে আদায় তলানিতে নামলেও খেলাপি ঋণ কম ছিল। বছর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায়, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ওই গ্রাহককে খেলাপি করা হয়নি। ফলে আদায় তলানিতে নামলেও খেলাপি ঋণ কম ছিল। বছর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায়, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
২০২১ সালে বিশেষ সুবিধার ছাড় কিছুটা কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনার বলা হয়, ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি হবেন না গ্রাহক। এরপরও ঋণ খেলাপি বাড়তে থাকে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ গিয়ে ঠেকে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকায়, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
পরে বিভিন্ন মহলের চাপে খেলাপি ঋণ কমাতে নতুন ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বলা হয়, ২০২১ সালে একজন ঋণ-গ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা, তার ১৫ শতাংশ দিলে গ্রাহক খেলাপি হবেন না। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া নির্দেশনা আলোকে কেউ ২০ জানুয়ারির মধ্যে ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও গ্রাহক খেলাপি হননি। তারপরও আশানুরূপ খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বা ৫১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬৪ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। আলোচিত সময়ে বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়েছে ৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ। তারা মোট ৩৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
গত পাঁচ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের যত সুযোগ দেওয়া হোক না কেন, তারা ঋণ পরিশোধ করবে না। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা পার পেয়ে যাবে। তাই ঢালাও সুযোগ কমিয়ে দেওয়া দরকার। পাশাপাশি যে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কেস-টু-কেস বসে সমাধান করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, খেলাপি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলো কেউ মানছে না। যদি নির্দেশনা না মানে তাহলে তা দিয়ে লাভ কী? তাই অযথা নির্দেশনা না দিয়ে ভালো হবে ব্যাংকগুলোর উচিত ঋণ আদায়ে টার্গেট বেঁধে দেওয়া। যদি তা অর্জন না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এ গভর্নর।
এসআই/আরএইচ