বিদেশি কুল চাষ করে তরুণ উদ্যোক্তা রাজুর চমক
বরই নাম শুনলেই জিহ্বায় জল চলে আসে। এই বরই চাষ করেই ভাগ্য বদলেছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের খোর্দ্দদাদপুর গ্রামের যুবক রাজু আহমেদ।
জানা গেছে, কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই রাজুর কৃষি কাজের প্রতি একটু বেশিই আকর্ষণ ছিল। ২০২০ সালে ৬০ শতাংশ জমিতে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী ও কাশ্মীরী আপেল কুলের চারা রোপণ করেন। সে বছর খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
রাজুর কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি কাঁচা পাকা কুল থোকায় থোকায় ঝুলছে। কুলের ভারে মাঠিতে নুয়ে পড়েছে কিছু কিছু গাছের ডাল। গাছ থেকে আপেল রঙের পাকা কুল নিয়ে দেখালেন বাগানের মালিক। রঙটা ঠিক যেন আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। পাখি ও চোর থেকে রক্ষায় পুরো বাগান জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।
রাজু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২০ সালে ৬০ শতাংশ জমিতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের কাশেম নার্সারি থেকে বল সুন্দরী ও আপেল কুলের চারা রোপণ করি। অক্লান্ত পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ৬ মাসের মাথায় সবকটি গাছেই বরই ধরে। প্রথম বছর ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করি। এ বছর ফলন আরও ভালো হয়েছে। খরচও কম হয়েছে। আশা করছি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারবে। বরই চাষ করে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতিটি গাছে ঝুলছে পাকা বরই। এগুলো খেতে অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে নতুন একটি জাত ভারত সুন্দরীর চারা রোপণ করবে।
রাজু আহমেদ আরও বলেন,আমি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি আমার আলাদা একটা টান কাজ করেছে। ফরিদপুর কৃষি কলেজ থেকে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রজেক্টে কাজ করেছি। পরে নিজে কিছু করার চিন্তাভাবনা থেকে কুল চাষ শুরু করি। কুল চাষ করে প্রথম বছরই সফলতা পাই। আমার এই সফলতা দেখে কুলের বাগান করতে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে পরামর্শ নিতে আসেন।
রাজু আহমেদের ভাই শহীদ শিকদার বলেন, প্রতি কেজি বরই প্রথম দিকে ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বর্তমানে পাইকারি ৬০-৭০ টাকা এবং খুচরা ৮০-৯০ টাকা দরে বিক্রি করছি। চাহিদা বেশি থাকায় খুচরা বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতে বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি অফিসার চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস ও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার বাহাউদ্দীন স্যারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শে ভালো ফলন পেয়েছি।
স্থানীয় আজিজুল, সবুর, সজল, রইসসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রাজু আমাদের এলাকার শিক্ষিত ছেলে। সে ফরিদপুর থেকে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করেছে। পরে গ্রামে এসে উদ্যোক্তা হয়ে নিজেই কুল বাগান করে সফলতা পেয়েছে। আমরা গ্রামের যারা বেকার যুবক আছি তারা রাজুর সফলতা দেখে নিজেরা উৎসাহিত হয়েছি। এখন আমরা রাজুর কাছ থেকে কুল চাষের পরামর্শ নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় এ বছর ২১ হেক্টর জমিতে বিদেশি জাতের কুল চাষ হয়েছে। বেশিরভাগ কুল বাগানের মালিকই লাভবান হয়েছে এবং অল্প সময়ে সফলতা পেয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি এবং মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বাগান পরিদর্শন করছি।
মীর সামসুজ্জামান/এসপি