সূর্যমুখীর হাসি থেকে দৈনিক আয় ১০ হাজার
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয় ফুলের মুখ। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিকেলে দিক পরিবর্তন করে যায় পশ্চিমে। বলছিলাম সূর্যমুখী ফুলের কথা। সূর্যমুখীর হাসিতে ভাসছে নরসিংদী। প্রতিদিন বিকেলেই সূর্যমুখী ফুল বাগানে ভিড় করছেন সৌন্দর্যপিপাসুরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে উপভোগ করছেন শেষ বিকেলের হলুদ আভা।
এই দৃশ্য নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের নাগরিয়াকান্দি শেখ হাসিনা সেতু এলাকার। ব্রিজের দক্ষিণ পাশে তাকালেই হলুদ আর হলুদ। উপর থেকে তাকালে মনে হয় হলুদ সুতোয় গিট দিয়ে কোনো কাঁথা সেলাই করা হয়েছে। তবে সেই বাগানে ঢুকতে হলে আপনাকে গুনতে হবে জনপ্রতি ২০ টাকা।
জানা যায়, তৌহিদুল ইসলাম মাসুম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে ৯ বিঘা পতিত জমিতে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুল চাষ করেন। প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি লাভ আশা করছেন ৫০ হাজার করে।
বাগান মালিক তৌহিদুল ইসলাম মাসুম বলেন, নদীর পাড়ের আমাদের এই জমিটা পতিত ছিল। হঠাৎ মাথায় এল সূর্যমুখী ফুলের তেল উৎপাদন করব। তেল উৎপাদনের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের আড্ডা দেওয়া এবং ছবি তোলার সুব্যবস্থা করতে পারি তবে বাড়তি কিছু টাকা আয় করা যাবে। সেই চিন্তা থেকে বাগানের চারপাশে বেড়া ও সৌন্দর্য বর্ধন করি। প্রতিদিন ৫০০ টিকিট বিক্রি হয়। ছুটির দিনগুলোতে টিকিট বিক্রি বেড়ে যায়। প্রতিটি টিকিটের দাম ২০ টাকা। আমার এখানে প্রায় ৩০ জন কর্মচারী আছে পরিচর্যা করার জন্য। সব কিছু বাদ দিয়ে গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হয়।
রওশন আরা পারভীন পলি নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। বাচ্চাদের নিয়ে বাবার বাড়ি নরসিংদীতে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে এই মনোরম পরিবেশ দেখে বেশ ভালো লাগছে। দীর্ঘ দিনের বন্দিদশা থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারছি।
মিল্টন নামে এক কলেজছাত্র এসেছেন পলাশ উপজেলা থেকে। তিনি বলেন, বন্ধুরা মিলে এখানে ঘুরতে এসে অবাক। শেষ বিকেল, নদী, এত সুন্দর এবং মনোরম একটা পরিবেশ পাব ভাবতে পারিনি।
পিংকি ঘোষ নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, আমি আমার পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। সবাই খুব খুশি। জায়গায়টা বেশ মনোরম। ছবি তুলতেছি। বেশ ভালো লাগছে।
নরসিংদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজের বাংলার প্রভাষক সিরাজুম মুনিরা এসেছেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঘুরতে। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটা ভাষার মাস। শেষ বিকেলে সূর্য যখন হেলে পড়ে তখন সূর্যমুখীর দিকে তাকালে মনে হয় ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদরা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মনোরম একটা বিকেল কাটছে।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষ এখনও খুব একটা প্রচলিত নয়। তবে যারা চাষ করতে চায় তাদের আমরা প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও বীজ দিয়ে থাকি। নরসিংদী জেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে।
এসপি