আমরা কচুরিপানার মতো ভাসছিলাম, প্রধানমন্ত্রী ঠাঁই দিলেন
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চাকরি পাওয়ার পর জমি ও ঘর পেলেন পুলিশে প্রশিক্ষণরত আছপিয়া আক্তার কাজল। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় হিজলা হিজলা উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না গৌবিন্দ্রপুর গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে কনস্টেবল আছপিয়ার মায়ের কাছে ঘরের চাবি তুলে দেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ।
চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, জননেত্রী শেখ হাসিনার দলের একজন কর্মী হিসেবে আজ আছপিয়াকে জমি ও ঘর তুলে দিতে পারাটা আমার জীবনের অন্যতম একটি তৃপ্তির জায়গা। এভাবে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের সহায়তা করার যে মহানুভবতা শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দিয়েই সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একজন ভূমিহীনকে চাকরি নিশ্চিত করতে তাকে ভূমি এবং ঘর করে দিয়েছেন। তার (প্রধানমন্ত্রী) এই যে বৃহৎ দান, সেখানে আমি থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজ আছপিয়ার পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দিতে পারাটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২ শতাংশ জমির দলিল ও একটি নতুন ভবনের চাবি আছপিয়ার মা ঝর্ণা বেগমের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয়।
তবে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়ে যাওয়ায় প্রশিক্ষণে রংপুর থাকায় জমির দলিল ও চাবি হস্তান্তর আনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গৌতম বাড়ৈ, উপজেলা চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রবিউল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, বরজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার প্রমুখ।
জমির দলিল ও চাবি হাতে পেয়ে আছপিয়ার মা ঝর্ণা বেগম বলেন, এই অনুভূতি কারও কাছে বলে শেষ করতে পারব না। এত ভালো লাগছে তা কীভাবে বলব, ভাষা নেই। আমরা কচুরিপনার মতো ভাসছিলাম, প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্থায়ী ঠিকানা দিলেন, ঠাঁই দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিলেন। তিনি আমাদের পরিচয় দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইনসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।
২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইনসে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আছপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ, তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
গত ৮ ডিসেম্বর হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আছপিয়া বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তার নির্দেশে চাকরি, জমি ও ঘর দেওয়া হয় বহুল আলোচিত কলেজছাত্রী আছপিয়া আক্তার কাজলকে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ