১৮ মাস ধরে বেতন না পেলে কীভাবে চলে একটি পরিবার
স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যাসমেন্ট প্রজেক্ট (STEP) সমাপ্ত প্রকল্পের রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন ৭৭৭ জন শিক্ষকের ১৮ মাস ধরে বেতন-ভাতা বকেয়া আছে। এর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
পরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। কর্মসূচিতে শিক্ষকেরা তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে দ্রুত স্থানান্তর ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন দেওয়া শর্তেও আমরা কেন আমাদের বেতন-ভাতা পাচ্ছি না, তা আমাদের বোধগম্য না। আমরা বেতন না পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছি। তবু আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। দ্রুত আমাদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে বেতন-ভাতার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষক শর্মিলা বলেন, সারাদেশে ৪৯টি পলিটেকনিকে একযোগে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন পালন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এ কর্মসূচি পালন করছি। একজন শিক্ষক ১৮ মাস ধরে বেতন না পেলে কীভাবে চলে একটি পরিবার? কত অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৭৭৭ শিক্ষকের সবার চাকরি রাজস্ব খাতে দ্রুত স্থানান্তর করে ও বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের একাত্মতা ঘোষণা করে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হাসান বলেন, শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। স্টেপের শিক্ষকরা দীর্ঘ সময় ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ার কারণে অসহায়ত্ব বোধ করছেন। আমরা আইডিইবি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ছাত্র-শিক্ষক সংগ্রাম পরিষদ তাদের অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের একাত্মতা ঘোষণা করছি। সেই সঙ্গে তাদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, স্টেপের আওতায় আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারা ১৮ মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে রাজস্ব খাতে দ্রুত স্থানান্তর করে তাদের বেতন প্রদান করা হয়।
শিক্ষকদের তথ্যমতে, কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১২ ও ২০১৪ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ১ হাজার ১৫ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়, যার মধ্যে ৭৭৭ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তবনা প্রদান করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৭৮৬ জন শিক্ষককে সাময়িকভাবে বহাল রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়।
সে মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা কার্যক্রম পরিচলনা করায় প্রকল্প মেয়াদ শেষে বেতন পরিশোধের পর ৭৮৬ জন শিক্ষকের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য শিক্ষামন্ত্রী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বরাবর ডিও পত্র দেন। তারপরও দীর্ঘসূত্রতার কারণে স্থানান্তরপ্রক্রিয়া বাস্তবে রূপ নেয়নি। ফলে ২০২০-২১ পর্যন্ত সব শিক্ষকের ১৮ মাস ধরে বেতন বকেয়া বন্ধ রয়েছে।
এনএ