দর্শনা চেকপোস্টে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে নেগেটিভ সনদ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভারত থেকে আসা এক যাত্রীকে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হয়েছে করোনার নেগেটিভ সনদ। আবার টাকা নিলেও তার রশিদ দিচ্ছে না চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
দর্শনা চেকপোস্টে সব যাত্রীদের করোনার র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা বাধ্যতামূলক। এ কারণে সবার কাছ থেকে নেওয়ার কথা ১০০ টাকা। তবে অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। আবার নমুনা না নিয়েই করোনার নেগেটিভ সনদ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া টাকা নিয়েও নমুনা পরীক্ষা না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে আসেন বাংলাদেশি নাগরিক রেখা রানী সাহা। চেকপোস্টে ঢুকে স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ছিল তার। কিন্তু তা করা হয়নি।
তিনি বলেন, দর্শনা চেকপোস্টে ঢোকার পর আমার নিকট থেকে একশ টাকা নেওয়া হয়। নমুনা পরীক্ষা ছাড়ায় আমাকে করোনা নেগেটিভ সনদ ধরিয়ে দেয় তারা। পরে আমাকে চলে যেতে বলে।
বাংলাদেশে আসা অপর দুই নারী বলেন, আমাদের দুজনের কাছ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। নমুনাও নিয়েছে। তবে আমাদের টাকা নেওয়ার রশিদ দেয়নি তারা।
এদিকে দর্শনা চেকপোস্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথের রেজিস্ট্রার খাতায় দেখা যায়, তালিকায় নমুনা না নেওয়া রেখা রানী সাহার নামই নেই। তাহলে কীভাবে পেলেন করোনার নেগেটিভ সনদ, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় হেলথ স্ক্রিনিং বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) জামাত আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে তিনি নমুনা না দিয়েই চলে গেছেন। আবার কোনো কোনো সময় ভিড়ের কারণে অনেক রসিদ দেওয়া হয় না। আবার দু’একটা মিসও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার, স্কিন, হার্ট ডিজিস রোগী এবং ১২ বছরের নিচে যারা আসেন তাদের ইমিগ্রেশনের সুবিধার্থে নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
স্থানীয় স্বাস্থ্য সচেতনরা বলেন, শুরু থেকে চেকপোস্টের স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। নমুনা না নিয়ে করোনার নেগেটিভ সনদ দেওয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়বে। দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।
দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে ১৮০৪ বাংলাদেশি নাগরিগ, ১১২৬ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ থেকে ১৩৩৭ বাংলাদেশি নাগরিক ও ১৭২৫ ভারতীয় নাগরিক ভারতে গেছে। এর মধ্যে ১১ বাংলাদেশি এবং ১৩ ভারতীয় নাগরিকের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রবেশের অনুমতি মিললেও ভারতীয় নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাদেরকে ভারতে পাঠানো হয়েছে।
দর্শনা ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই আব্দুল আলীম বলেন, দেশত্যাগ বা দেশে প্রবেশের সময় অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। ভারতের কোনো যাত্রী করোনা পজিটিভ হলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। দেশের কোনো যাত্রী পজিটিভ হলে তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়ে থাকে। তবে দেশত্যাগ বা প্রবেশের সময় করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো দুর্নীতির সুযোগ নেই। আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। তবে টাকার বিনিময়ে করোনার সনদ এবং টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা না করেই নেগেটিভ সনদ দেওয়া এটা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হেনা জামাল শুভ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, ভারতে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক যাত্রীর করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে থাহলে এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরআই