১০ শয্যার ডায়রিয়া ইউনিটে ভর্তি রোগীর ৮৫ ভাগ শিশু
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা। ডায়রিয়া ইউনিটে কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। ১০ শয্যার ডায়রিয়া ইউনিটে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৮৫ ভাগই শিশু।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত এ ইউনিটের ১৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক একজন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটের ইনচার্জ মুহাম্মদ মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডায়রিয়া ইউনিটে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৭১ জন ও অক্টোবর মাসে ২১৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে শীত শুরু হওয়ার পর থেকেই এ ইউনিটে রোগী সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে নভেম্বর মাসে ২৫১ জন ও ডিসেম্বর মাসে ২৮১ জন রোগী এই ইউনিটে ভর্তি হয়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২৪ জন রোগী ভর্তি হয়। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ৭ জন ডায়রিয়া রোগে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জন শিশু আর দুজন প্রাপ্তবয়স্ক। এ মাসের প্রথম থেকেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ডায়রিয়া ইউনিটের শয্যাসংখ্যা।
ডায়রিয়া ইউনিটে সন্তানকে ভর্তি করেছেন সিংগাইরের বাইমাইল এলাকার আব্দুল করিম। তিনি বলেন, চার দিন ডায়রিয়া ইউনিটে ছেলে রাইয়ানকে (১০ মাস বয়স) নিয়ে ভর্তি ছিলাম। তখন সুস্থ হওয়া পরে চিকিৎসক ছুটি দিয়ে দেন। গতকাল ছেলের অবস্থা খারাপ হওয়ার আবারও এখানে ভর্তি করেছি। এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ হয়েছে। কিন্তু এখান থেকে ছুটি পেতে আরও এক দিন লাগবে।
সাটুরিয়া উপজেলার চর তিল্লী গ্রামের রিনা আক্তার বলেন, দুই দিন ধরে ছেলে নাবিল (১৪ মাস বয়স) ডায়রিয়া হয়। পরে গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাই। কিন্তু ছেলে সুস্থ না হওয়ায় আজ এখানে ভর্তি আছি। তবে এখানে রোগীর অনেক চাপ। বেড না থাকায় ফ্লোরেই ছেলেকে নিয়ে রয়েছি। তারপরও নার্স ও চিকিৎসকরা রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডায়রিয়া ইউনিটের ফ্লোরে ছেলে জুহানিকে (৭) নিয়ে বসা মো. রমজান আলী বলেন, রোগীর তুলনায় এখানে বেড (শয্যা) অনেক কম। অনেকে বেড (শয্যা) না পেয়ে ফ্লোরে কিংবা বাইরের বেঞ্চেও চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতের সময় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। এই হাসপাতালের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে ডায়রিয়া ইউনিটের কোনো উন্নয়ন বা পরিবর্তন হয়নি। এ জন্য ইউনিটে শয্যা বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
ডায়রিয়া ইউনিটের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স মুহাম্মদ মাসুদ রানা বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই এই ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ইউনিটে শয্যা রয়েছে মাত্র ১০টি। তবে শয্যার স্বল্পতা থাকলেও এ ইউনিটে দায়িত্বরত নার্স ও চিকিৎসকরা রোগীর আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. কাজী এ কে এম রাসেল বলেন, শীতকালে বেশির ভাগ শিশুরা রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও বিশেষ যত্নে রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত। বর্তমানে ডায়রিয়া ইউনিটে ভর্তি রোগীর ৮৫ ভাই শিশু। তবে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ঘাটতি নেই বলে তিনি জানান।
সোহেল হোসেন/এনএ