স্বামী-সন্তান ফিরবেন, আশায় বুক বেঁধে আছেন খাদিজা
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি বেতাগীর আরিফুর রহমান ও তার মেয়ে কুলসুমের। তারপরও নিখোঁজ স্বামী-সন্তানকে ফিরে পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন স্ত্রী খাদিজা। বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল লতিফ মৃধার ছেলে আরিফুর রহমান (৩৮)।
স্ত্রী খাদিজা বেগম ও ছোট দুই সন্তানকে রেখে মেজো মেয়ে কুলসুমকে (৪) নিয়ে ঢাকায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন আরিফুর রহমান। ২৩ ডিসেম্বর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন আরিফুর। সকালের মধ্যেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে রাত ৯টায় স্ত্রী খাদিজা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে লঞ্চে বসে তার কথা হয়। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! মেয়েকে নিয়ে আজও ফেরা হয়নি আরিফুরের।
দুর্ঘটনার পর স্বজনরা নিখোঁজ বাবা ও মেয়েকে লঞ্চে, নদী, বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রশাসনের উদ্ধার করা লাশের মধ্যেও খুঁজে পাননি। নিখোঁজের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। স্বামী ও কন্যাসন্তানকে হারিয়ে খাদিজা বেগম এখন পাগলপ্রায়। তিনি তার কন্যাসন্তান ও স্বামীকে ফিরে পেতে চান।
অপরদিকে ছেলে আরিফুর রহমানকে হারিয়ে বৃদ্ধা মা আলেয়া জাহান মূর্ছা যাচ্ছে। সে তার ছেলে ও নাতনিকে ফেরত চান। কথা হয় আরিফুর রহমানের বৃদ্ধা মা আলেয়া জাহানের সঙ্গে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আরিফুর সংসারের একমাত্র উপার্জনসক্ষম ব্যক্তি ছিল। এখন তার দুই সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কীভাবে ওরা বড় হবে? ওদের ভবিষ্যৎ কী? ছেলে ও নাতনির পরিচয় শনাক্তে আমরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছি। তবে এখনো আমরা তাদের জীবত ফেরার আশায় আছি।
আরিফুর রহমানের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, লঞ্চে উঠে রাত ৯টায় আমার সাথে ফোনে সর্বশেষ কথা হয়। ঘটনার পর থেকেই আত্মীয় স্বজনরা খুঁজতে থাকলেও এখনো আমার স্বামী ও সন্তানের কোনো খোঁজ মেলেনি। তারপরও তাদের ফিরে পাব বলে আশায় আছি। আমার বড় মেয়েটা মানসিক প্রতিবন্ধী আর ছেলেটা ছোট। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলব? সেই চিন্তায় দিশেহারা আমি।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মরদেহ গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে ২৩ জনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাদের গণকবরে দাফন করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিবারকে দাফন কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী অতিক্রমকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বরগুনা, ঝালকাঠি ও ঢাকায় তিনটি মামলা হয়েছে। মামলায় লঞ্চের মালিকসহ পাঁচজন কারাগারে রয়েছেন।
এমএসআর