এক বেলা রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত মানেন না চালকরা
রাজশাহী নগরীতে এক বেলা চলবে ব্যাটারিচালিত রিকশা। সব রিকশা দুটি ভাগে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যক্রর করতে রিকশাচালক ও মালিকদের চিঠিও পাঠিয়েছিল নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান মালিক-শ্রমিকরা। সোমবার সকাল থেকে বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন তারা। দুপুরে অবরোধ করা হয় নগর ভবন। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় নগর ভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমি প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকাকালে ২০০৯ সালে প্রথম সরু চাকার চার্জার রিকশা চালু হয়। তখন বিআরটিএর কোনো অনুমোদন ছিল না। এগুলোকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
তখন আমি মেয়র হিসেবে কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে রাজশাহীতে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করেছিলাম। যাত্রীদের সহজ চলাচলের কথা ভেবে আমরা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমরা চার্জার রিকশার লাইসেন্স দিই। পরবর্তীতে শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় লাইসেন্স চালু করে দিই।
মেয়র বলেন, দীর্ঘদিন পর সরু চাকার যে চার্জার রিকশা ছিল, সে রিকশা উঠে মোটা চাকার চার্জার রিকশা চলাচল শুরু করে। চার্জার রিকশা চলাচলের কারণে জনগণের যাতায়াতে অনেক সুবিধা হয় এবং অনেকের বেকারত্ব দূর হয়।
তবে বর্তমান সময়ে যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রিকশামালিক ও চালক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে দুই শিফটে রিকশা চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
মেয়র আরও বলেন, রিকশাচালকদের অবরোধের খবর আমি জানতাম না। বিষয়টি নিয়ে রিকশা চালক-মালিকপক্ষের বক্তব্য আছে, এমনটি আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি আমাকে কিংবা পরিষদকে জানালে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। শিগগিরই বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
মেয়র লিটন বলেন, আমরা হাজার সমস্যা নিয়ে কাজ করি। নগরবাসীকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। অনেকেই বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছেন। একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে দুর্ভোগে পড়তে হয়। আমরা এমন কিছু করব না যাতে আপনাদের কষ্ট হয়। কাজেই অবরোধ তুলে নিন।
মেয়রের অনুরোধে অবরোধ তুলে নিয়ে ঘরে ফেরেন রিকশামালিক ও চালকরা। দুপুরের পর থেকেই সীমিত আকারে চলাচল শুরু হয় রিকশার। এর আগে সকালে নগরীর রেলগেট এলাকায় জমায়েত হন নগরীর হাজারো রিকশাচালক ও মলিক। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা নগর ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক হয় তাদের। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরে মালিক-শ্রমিকদের একটি দল নগর ভবনে স্মারকলিপি দেন।
সম্প্রতি সবুজ ও মেরুন দুই রঙের করে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পালা করে চালাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাসিক। এই সিদ্ধান্ত চালু হচ্ছিল তিন চাকার রিকশার ক্ষেত্রেও। রিকশা রঙ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে মালিকদের। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে নগরীতে মাইকিং করা হয়।
এক বেলা রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ নগরীর কলাবাগান এলাকার রিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। এক বেলা রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ, বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল এমনকি সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারব না। ভাড়ায় রিকশা চালাই। মালিককে দেব কী?।
জানতে চাইলে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের রাজশাহী নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শান্ত বলেন, ২৫ জানুয়ারি রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তর থেকে আমাদের চিঠি দিয়ে জানায়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই রঙের করে রিকশা নামাতে হবে রাস্তায়। মালিক-শ্রমিকরা রিকশা একবেলা চালানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারিনি। আমরা আমাদের এক দফা দাবি নিয়ে নগর ভবনে এসেছি।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম