স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে প্রাণ গেল স্বামী-ছেলেসহ ৩ জনের
উন্নত চিকিৎসার জন্য অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকা পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয় স্ত্রীর। তার মরদেহ নিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্সেই ফিরছিলেন স্বামীসহ পাঁচজন। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় স্বামী, ছেলেসহ অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘটেছে এ দুর্ঘটনা। এ সময় আরও দুইজন আহত হয়েছেন। তারা সবাই চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলের জানাজা শেষে পারিবারিক করবস্থানে মরদেহ পাশাপাশি দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের মজারপোতা গ্রামের মৃত দীন মোহাম্মদ মন্ডলের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুল (৭৫), তার ছেলে গোলাম সোহরাব শিপলু (৪৫) ও অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার চুয়াডাঙ্গা শহরের দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ পুটের ছেলে শাহাবুল (২০)।
এছাড়া দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন গোলাম রসুলের মেয়ে বিথি খাতুন (৪০) ও চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার ইসমাইল হোসেনের ছেলে অ্যাম্বুলেন্সচালক সাইফুল ইসলাম (২৪)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার মজারপোতা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুলের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬৫) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দামুড়হুদার চিৎলা নিউ ডিজিটাল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়।
সেখান থেকে হাজেরা খাতুনকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকার নিরাময় ক্লিনিকের একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন রোগীর স্বজনরা। সঙ্গে ছিলেন হাজেরা খাতুনের স্বামী গোলাম রসুল, ছেলে গোলাম সোহরাব শিপলু ও মেয়ে বিথি খাতুন।
হাজেরা খাতুনকে ঢাকা নেওয়ার পথে মানিকগঞ্জ পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। সেখান থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করেই মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। সোমবার ভোর ৬টার দিকে মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার হাকিম স্টোরের সামনে পৌঁছালে সেখানে থাকা আকিজ টেক্সটাইল মিলসের শ্রমিক পরিবহন করা বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কা লাগে। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় গোলাম সোহরাব শিপলুর।
পরে স্থানীয় ও পুলিশের সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে তিনজন ও দুজনকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠায়। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে থাকা তিনজনকেই উন্নত চিকিতসার জন্য পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে গোলাম রসুল ও হেলপার শাহাবুল হোসেনের মৃত্যু হয়। এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বিথি খাতুন ও চালক সাইফুল ইসলাম।
এদিকে মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আরও দুজনের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত গোলাম রসুল ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তার একমাত্র ছেলে নিহত গোলাম সোহরাব শিপলু স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন ছোট মেয়ে বিথি খাতুন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়া বাস এবং অ্যাম্বুলেন্স আটক করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে।
সোমবার রাত ২টার দিকে নিহত হেলপার শাহাবুলের লাশ নিজবাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবারের লোকজন। শাহাবুলের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার।
এদিকে মঙ্গলবার ভোরে লাশ বহনকারী গাড়ি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। একই পরিবারের তিনজনের জানাজা নামাজে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে পারিবারিক কবস্থানে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলেকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
অ্যাম্বুলেন্সের মালিক সাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার রাতে অসুস্থ এক নারীকে আমার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ঢাকা গিয়েছিল। যাওয়ার পথেই ওই নারীর মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে সোমবার ভোর ৬টার দিকে মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কা লাগে। এতে আমার অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এছাড়া ওই রোগীর স্বামী ও ছেলের দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
এসপি