সুইচ টিপলেই আয়, ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট জল-জোছনার শহরে
সুনামগঞ্জ শহরে ব্যাটারিচালিত ঝুঁকিপূর্ণ তিন চাকার অবৈধ রিকশা চলাচল বেড়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ প্রতিটি সড়কেই এখন এসব রিকশা চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকলেও প্রচলিত রিকশার চেয়ে অল্প শ্রম ও কম সময়ে উপার্জন বেশি করার সুযোগ থাকায় এর দিকে ঝুঁকেছেন বহু মানুষ।
জল-জোছনার ছোট শহর সুনামগঞ্জ শহরে প্রতিদিন এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে প্রায় ৩৫০টি। সুইচ টিপলেই এই রিকশার গতি সনাতন রিকশার চেয়ে প্রায় ৩ গুণ হয়ে যায়।
রিকশাচালক মো. ফখর উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শহরের মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তিনি। জীবিকার তাগিদে রিকশার হাতল ধরেছেন একযুগ আগে। এতদিন পায়ে চালানো রিকশা চালাতেন। তিন মাস আগে ধারকর্য করে ৭০ হাজার টাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছেন। শহরে রিকশা চালাতে এই পর্যন্ত কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাকে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক বহু শিশু-কিশোরকেও এ রিকশা চালাতে দেখা যাচ্ছে। বেশি ভাড়ার লোভে গ্যারেজ মালিকরাও ঝুঁকেছেন এ রিকশার দিকে।
রিকশাচালকরা বলছেন, সনাতন রিকশায় দিন শেষে ৫০০ থেকে ৬০০ ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা উপার্জন সম্ভব।
শহরের পুরাতন বাসস্টেশনের বাসিন্দা মাহবুবুল হাসান শাহীন বললেন, সামান্য অসতর্ক হলেই এসব রিকশা দুর্ঘটনায় পড়ে। তবুও বাড়ছে দ্রুতগতির অবৈধ রিকশা। শহরে একসময় এই রিকশা চলতে দেওয়া হতো না, এখন শহরের সকল পথেই এসব রিকশা চলছে।
সুনামগঞ্জ ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলা শহরে ৩০০ থেকে ৩৫০ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। এগুলোর কোনোটিরই নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের জন্য সুনামগঞ্জ পৌরসভার কাছে আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি আসকর মিয়া বললেন, সনাতন রিকশার অনেক চালকই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, তারা পায়ে ঠেলে আগের মতো রিকশা চালাতে পারেন না, তাদের কথা বিবেচনা করেই ব্যাটারিচালিত রিকশা নিবন্ধন করার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌরসভার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও এসব রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
শহরের রাস্তায় অবৈধ এ যানের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বলেন, শহরে নির্দিষ্ট সংখ্যক অটোরিকশা চলার অনুমতি এবং লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশনা আছে। তবে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ নেই, কোনো নির্দেশনাও নেই। লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি। এসব রিকশায় কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে, চালক পালিয়ে গেলে, তাকে বের করাও কঠিন হবে। কে কোন রিকশা চালায় কোনো প্রমাণপত্র নেই, লাইসেন্সবিহীন এসব রিকশা আটক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে, এজন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা লাগবে।
এনএফ