পাননি নৌকার টিকিট, ‘বিদ্রোহী’ হয়ে ভোটযুদ্ধে ছোটন
আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কিন্তু ওই তালিকায় তৃণমূল পর্যায়ে বিপুল ডেলিগেট ভোটে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দফতর সম্পাদক ও ২ নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ছোটনের ঠাঁই মেলেনি নৌকায়। তার পরিবর্তে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী পেয়েছেন নৌকা।
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নিজেকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ঘোষনার পরপরই উঠান বৈঠক, গণসংযোগসহ কর্মী-সমর্থক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছন।
রোববার (০৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে প্রায় ৩০ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আছি। নানা অজানা মামলা হামলার শিকার হতে হয়েছে। ২০০১ সালে আমি ও আমার পরিবারের সবাই মামলা ও হামলা শিকার হয়েছি। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ পর্যায়ক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছি।
ইউনিয়নবাসীর জনসমর্থন ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আমার জন্মস্থান ২ নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের জনগণের সেবা করার লক্ষ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার মনস্থির করি। আমার পরিবার একটি ত্যাগী আওয়ামী পরিবার।
এই ইউনিয়ন থেকে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল ছয়জন প্রার্থী। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমিও নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তৃণমূল পর্যায়ে ডেলিগেট ভোট হয়। আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করি। এমনকি ঢাকার পাঠানো তালিকাতেও আমার নাম ছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে নৌকা আর আমার হয়নি, পেয়েছেন অন্য আরেকজন।
ছোটন বলেন, এত বছর আওয়ামী লীগ করে মামলা হামলার শিকার হয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর নৌকা আমি পাইনি তো কী হয়েছে। একজন ত্যাগী প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মী পেলে এতটা খারাপ লাগত না। কিন্তু যারা হাইব্রিড ২০০৮ এর পর দলে আইসা দলটাকে তছনছ করে দিয়েছে, ইলিশার জনগণকে অত্যাচার করেছে, এবার নৌকা প্রতীক তারা নিয়ে গেছে। এই ইলিশাতে এমন একটা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে নিয়ম বলতে কিছু নেই। অনিয়মকেই নিয়ম হিসেবে চালাচ্ছে তারা।
ওই দিন রাতে আমার মন অনেক খারাপ হওয়ার পরে আমার মাকে ফোন করেছি। তখন তাকে বললাম, মা আমি তো নৌকা খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। আমি নৌকা রাখতে পারলাম না। তখন মা বলল, বাবা আমি আগেই আশঙ্কা করেছিলাম এমন কিছু হবে। মাকে বললাম, তুমি সিদ্ধান্ত দাও ইলিশার সাধারণ মানুষ ও আমি কী করব? মা বললেন, আমি তোকে অনুমতি দিলাম তুই নির্বাচন কর। আমার দোয়া তোর সঙ্গে সবসময় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের সেবা করার জন্য। এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে অন্য কেউ যদি মানুষের সেবা না করে অত্যাচার অবিচার করে সেখানে আমি ছাড় দেওয়ার পক্ষে নই। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি, আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। আমি জননেতা তোফায়েল আহমেদের একজন কর্মী। ইলিশার জনগণের সাধারণ ছেলে হিসেবে অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান প্রার্থী মো.আনোয়ার হোসেন ছোটন ২ নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন আব্দুর রব সর্দার বাড়ির ফজলুল হকের (হক সাহেব) ছেলে। ছোটনের চাচা ফরিদ হোসেন রতন এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোটন সাবেক ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও বর্তমান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দফতর বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদার। আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ভোলা সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে ১২ ইউনিয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি।
ইমতিয়াজুর রহমান/এসপি