চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন কিনলেন ঝুমন দাস
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন হেফাজতের বির্তকিত নেতা মামুনুল হককে সমালোচনা করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে যাওয়া ঝুমন দাস। রোববার (৫ ডিসেম্বর) তিনি উপজেলা রিটার্নিং অফিসার আলমগীর কবীর খানের কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম কেনেন তিনি।
১০ বছর আগ থেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জানিয়ে ঝুমন দাস বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় আমি পথ চলি। আমাদের জাতির পিতা ৩ হাজার ৫৩ দিন জেলে বন্দি ছিলেন। তার জীবন থেকেই আমার আদর্শের সূত্রপাত। জাতির পিতা রাজনীতি করে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছি আমিও।
ঝুমন বলেন, গতবার স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে একজন প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করেছি। তখন সাধারণ মানুষকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে এই প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে। নির্বাচনের পাঁচ বছরে মানুষকে যে কথা দিয়েছিলাম, তা করতে পারিনি। কারণ, আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। তাই আমার দেওয়া প্রতিশ্রুতির অসমাপ্ত কাজগুলো এবার নিজে চেয়ারম্যান হয়ে পূরণ করতে চাই।
আজ (রোববার) উপজেলায় এসে চালান ফরম কিনে ৫ হাজার ৫০০ টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছি। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে আমার প্রার্থিতার জন্য নমিনেশন ফরম কিনে এনেছি। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদে বাড়িসহ সব টেক্স (কর) পরিশোধ করেছি। নমিনেশন ফরম পূরণ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জমা দেব।
তিনি আরও বলেন, লোকমুখে শুনেছি আমার নমিনেশন বাতিল করার জন্য একটি মহল কাজ করে যাচ্ছে। আমাকে বাধা দেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। নিরাপত্তাজনিত কারণে নমিনেশন বাতিল হওয়ার কোনো কারণ হতে পারে না। কারণ নির্বাচন করার অধিকার আমার নাগরিক অধিকার।
শাল্লা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, নির্বাচনে সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান। যারা নমিনেশন ফরম সংগ্রহ করেছেন, বিধি অনুযায়ী তাদের আগামী ৯ ডিসেম্বরের ভেতর জমা দিতে হবে।
চতুর্থ দফায় শাল্লা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি। রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১২ ডিসেম্বর, আপিল ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ১৮ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১৯ ডিসেম্বর ও প্রতীক বরাদ্দ ২০ ডিসেম্বর।
শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার ২১ হাজার ৯১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ২৩ জন ও নারী ভোটার ১০ হাজার ৮৮৯ জন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তারা সবাই জামিন পান। কিন্তু জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাস। বিচারিক আদালতে কয়েক দফা জামিন নাকচের পর ২৩ সেপ্টেম্বর জামিন পান ঝুমন দাস।
সাইদুর রহমান আসাদ/এনএ