‘আমাকে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় এনে নাটক করা হয়েছে’
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। আদালতকে তিনি বলেছেন, তাকে ঢাকা থেকে ধরে সাতক্ষীরায় এনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুই মামলার চার্জগঠনের শুনানিকালে বিচারকের অনুমতি নিয়ে এজলাসে কথা বলেন সাহেদ করিম।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরার দেবহাটায় গ্রেপ্তার নাটক সাজানোর তিনদিন আগে আমি র্যাব কাস্টডিতে ছিলাম। ঢাকা থেকে আমাকে সাতক্ষীরায় এনে গ্রেপ্তার নাটক সাজানো হয়। এরপর আমার বাবা মারা যায়, বাবার মুখটিও দেখতে দেওয়া হয়নি। আমাকে ভারতে পালানোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে- এটা নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
সাতক্ষীরার আদালতে দুই মামলায় সাহেদ করিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, শুনানিকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে যখন সাহেদ করিম এসব কথা বলছিলেন তখন বিচারক তাকে থামিয়ে দেন। বিচারক বলেন- এসব কথা এখন বলার সময় নয়। সাক্ষী হওয়ার পরে যখন ৩৪২ ধারায় আপনার জবানবন্দি নেওয়া হবে তখন এসব কথা বলতে পারবেন। আপনাকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে।
অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, সাহেদ করিমের কাছ থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার দেখানো হয়েছে সেটি একটি কামারি পিস্তল। ভারতীয় ৩ হাজার ২৩৩ রুপী উদ্ধার দেখানো হয়েছে। মামলায় বাচ্ছু মাঝি নামে অপর এক ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়েছিল যিনি তিন বছর আগে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট ধারণা করা যায় মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা এসটিসি ২০৭/২০ (অস্ত্র) ও এসটিসি ২০৮/২০ (চোরাচালান) মামলার চার্জগঠন করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানে আদালতে সাহেদ কমিমকে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে আদালত আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পৃথক ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর এলাকা দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে শাহেদ করিমকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ৩ হাজার ২৩৩ ভারতীয় রুপি, তিনটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় খুলনা র্যাবের উপপরিদর্শক (এসআই)নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই দিনই অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দেবহাটা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
মামলায় সাহেদ করিম ও জনৈক বাচ্চু মাঝি নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার প্রথম তদন্তকারী নিযুক্ত হন দেবহাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল কুমার মৈত্র। ঘটনার দুইদিন পর র্যাবের এসআই রেজাউল করিম তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে সাহেদ করীমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২৪ আগস্ট বাচ্চু মাঝির হদিস না পেয়ে শুধুমাত্র সাহেদ করিমকে অভিযুক্ত করে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সেই মামলায় চার্জগঠণ করে সাক্ষ্যগ্রহনের দিন ধার্য করা হয়েছে।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর