রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়কের ৪৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন
• পীরগঞ্জে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দৃশ্যমান • নজর কাড়বে ড. ওয়াজেদের দৃষ্টিনন্দন তোরণ • নির্মাণ করা হবে অত্যাধুনিক আন্ডারপাস |
• সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজ সম্পন্ন • ডিসেম্বরে দমদমা ও মডার্ন সেতু উদ্বোধন • চলছে ফ্লাইওভার ও ওভারপাস নির্মাণকাজ |
২০১৯ সালের জুনেই শুরু হওয়ার কথা ছিল বহুল প্রত্যাশিত রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়। সরকার আদেশ দিলেও ছয় মাস দেরিতে পরের বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয় নির্মাণকাজ। এর কয়েক মাস যেতে না-যেতেই মহামারি করোনাসহ বন্যা, অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতারও ধকল গেছে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে।
এত কিছুর পরও থেমে নেই কাঙ্ক্ষিত এই মহাসড়কের নির্মাণকাজ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। গত ২২ মাসে দীর্ঘ ৫১ কিলোমিটার এই মহাসড়কের ৪৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো দৃশ্যমান হয়েছে পীরগঞ্জ এলাকায় প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার মহাসড়ক। এর মধ্যে শুধু এক কিলোমিটারে পুরো প্রকল্পের একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে নির্মাণশ্রমিক ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের।
এদিকে বহুল প্রত্যাশিত রংপুর-ঢাকা ছয় লেনের মহাসড়কে নতুন চমক বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী প্রয়াত ড. ওয়াজেদ মিয়া তোরণ। অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ তোরণটি পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুরে নির্মাণ করা হবে। ঢাকা থেকে রংপুর জেলায় প্রবেশ করতেই নজর কাড়বে সাদা মনের মানুষখ্যাত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার প্রতিকৃতি।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা রংপুরের নগরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ৫১ কিলোমিটার এই মহাসড়ক। নানা সমস্যা ও সংকট কাটিয়ে ছয় লেনের এ মহাসড়কের ৪৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। মুজিব বর্ষ ও বিজয়ের মাসেই রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়কের ওপর নির্মিত দমদমা ও মডার্ন সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এটি উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর হয়ে নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় পর্যন্ত হবে ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ক। ইতোমধ্যে এ মহাসড়কের ওপর সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পীরগঞ্জের বড়দরগা থেকে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তারও সমাধান হয়েছে। জরিপকাজও শেষ হয়েছে। এখানকার ২৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮ কিলোমিটারের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে।
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থেকে রংপুরের বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের ৭ নং প্যাকেজের আওতায় ছয় লেনের নির্মাণকাজ প্রায় ৪৫ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। কাজের গতি প্রতিদিন বেড়ে চলছে। আগামী বছরের মধ্যে ছয় লেনের রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্যাকেজ-৭-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী ম আফিদ হোসেন জানান, ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জের বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে পীরগঞ্জের খেদমতপুর এলাকায় তিন কিলোমিটার ও পীরগঞ্জ এলাকায় তিন কিলোমিটার সড়কে ছয় লেন দৃশ্যমান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ২৪০ একর জমির হুকুমদখল নেওয়া হয়েছে। জমির মালিকদের রংপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ দখলদারদেরও টাকা দেওয়া হয়েছে। ৭ নম্বর প্যাকেজের আওতায় মহাসড়কের দুই পাশে ৩০ কালভার্টের সব কটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
প্রকৌশলী আফিদ হোসেন আরও বলেন, মহাসড়কের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী অংশে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে, যার পরিধি হবে ১৭৬ মিটার। এ ছাড়া পীরগঞ্জের ধাপেরহাটে, লালদিঘিতে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। ছয় লেনের এই সড়কের মধ্যে চার লেনে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে। বাকি দুই লেনে চলাচল করবে স্বল্পগতির হালকা যানবাহন।
অন্যদিকে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্যাকেজ-৮ এর পীরগঞ্জের বড়দরগা থেকে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই নির্মাণকাজের আওতায় ১৭টি কালভার্ট, ৪টি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, যা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে ছয় লেনের এ মহাসড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবি রংপুরের সচেতন মহলের। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে ভূমি জটিলতা নিরসনে প্রশাসনকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে উন্নয়নপ্রত্যাশী মানুষজন। মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বাজার এলাকার আকতারুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবাই উন্নয়ন চাই, কিন্তু সহযোগিতা করতে চাই না। দেরিতে হলেও রংপুরে ছয় লেন মহাসড়ক হচ্ছে। এর জন্য আমরা আনন্দিত। নির্মাণকাজ যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।
একই এলাকার সাবেক পুলিশ সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রকল্পে যেভাবে কাজ হচ্ছে, তাহলে ২০২৩ সালেও নির্মাণ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দ্রুত কাজ শেষ করতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে আমাদেরও একটু ছাড় দিবে হবে।
সচেতন মহলের দাবি, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বদলে গেছে একসময়ের মঙ্গাপীড়িত রংপুর অঞ্চলও। দিনবদলের এই সময়ে উন্নয়নের মোড়কে সমৃদ্ধ হচ্ছে ভাওয়াইয়াখ্যাত উত্তরের জনপদ। রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটনসহ আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে অনেক অবকাঠামো এখন দৃশ্যমান। উন্নয়নের এ মহাসড়কে আরেকটি অর্জন হতে যাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলমান প্রকল্প ‘রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়ক’।
এনএ