নাটোরে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক রাইসের চাষ
চীনের সপ্তদশ শতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মহামূল্যবান ব্ল্যাক রাইস প্রথমবারের মতো নাটোরে চাষাবাদ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-খোলাবাড়িয়া গ্রামে এক বিঘা জমিতে রোপণ করা ব্ল্যাক রাইস কাটা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তায় স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অর্গানিক পল্লী এগ্রো ফার্মস অ্যান্ড নার্সারি গাজিপুর বিলে ব্ল্যাক রাইস চাষ করে সফলতা পেয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্লাভিনয়ের্ড বা এনথোসায়ানিন খুব বেশি পরিমাণে থাকায় এই চালের রঙ কালো হয়। এই উপাদান ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। কালো চাল ক্যানসার প্রতিরোধে অনন্য। কালো চালের উপাদানের কারণে উচ্চ রক্তচাপ কম হয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই চালে আয়রণ বেশি, কিন্তু শর্করা কম। আর এই চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর।
এই চালে শর্করার পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে কম। অন্যদিকে আঁশ ও ভিটামিন ‘বি’ এর পরিমাণ বেশি। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কালো চালের ভাত হজম হয় ধীরে। ফলে অনেক সময় ধরে ক্ষুধা লাগে না। সেই সঙ্গে শরীরকে দেয় অফুরন্ত শক্তি।
সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের গাজিপুরের কৃষক উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল জানান, নিজের এক বিঘা জমিতে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে কালো ধান আবাদ করেন। প্রচলিত ধান চাষে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন সে তুলনায় এই ধান চাষে সার খুব কম লাগে। কীটনাশকও পরিমাণে কম লাগে। বিঘাতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। ধানের উৎপাদন হবে ১৫ বা ১৬ মণ প্রায়। বাজারে বীজ হিসেবে বিক্রি করলে তার লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম বলেন, কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। এই চাল কিছু কোম্পানি প্যাকেটজাতের মাধ্যমে হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও স্থানীয়ভাবে কেজি প্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে পারে। তবে এ চালের উৎপাদন নাটোরের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, কালো চাল সাধারণ চালের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। তুলনামূলক বিচারে অ্যানথোসায়ানিন, প্রোটিন ও ফাইবার অন্যসব চালের থেকে বেশি থাকে। চালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। তিনি বলেন, সাধারণ ধানের মতোই পরিচর্যা করতে হয় এই ধানের। বাড়তি কোনো কিছুই করতে হয় না। কালো চাল দেখতে যেমন কালো, এ চালের ভাতও কালো।
তাপস কুমার/এসপি