ছেলে লন্ডনে তারেকের বডিগার্ড, বাবা দেশে নৌকার মাঝি!
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে সিলেটে আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন। অভিযোগ উঠেছে এ দুই উপজেলায় তৃণমূলের রায়কে অগ্রাহ্য করে পাল্টে দেওয়া হচ্ছে নৌকার প্রার্থী। বিশেষ করে তারেক রহমানের বডিগার্ড পরিচয় দেওয়া একজনের বাবা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তৃণমূলে।
নৌকার প্রার্থী পাল্টে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ। গত চারদিনে সিলেট জেলায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১০ বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রতিটি উপজেলায় গিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের ভোটে নৌকার প্রার্থী বাছাই করছেন। বাছাই শেষে তারা পৃথকভাবে উপজেলা ও জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রতিটি ইউনিয়নের রিপোর্ট পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে তিনজনের তালিকা কেন্দ্রের কাছে প্রেরণ করছেন।
কিন্তু তৃণমূলের এ রায়কে অগ্রাহ্য করে অনেক ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বদলে যাচ্ছে। তুলনামূলক কম জনপ্রিয় ও তৃণমূলের ভোটে পরাজিত এবং অন্য দল থেকে আসা নেতাকর্মীরা হয়ে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। বেশ কিছু উপজেলায় পর্যায়ক্রমে একের পর এক এমন ঘটনায় তোলপাড় চলছে সিলেট আওয়ামী লীগে। অনেকেই এ ব্যাপারে নালিশ করলেও কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
চতুর্থ ধাপে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের ৫টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বদল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা জানান, গোলাপগঞ্জের বুধবারি বাজার ইউনিয়নে তৃণমূলের মতামতে ১৪ ভোট পেয়ে প্রথম হলেও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হালিমুর রশীদ রাপু নৌকার টিকিট পাননি। বিপরীতে মাত্র এক ভোট পাওয়া আব্দুর রকিব ফারন সেখানে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। আর বাদেপাশা ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হওয়া আলিম উদ্দিন বাবুলকে না দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদকে।
স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, বুধবারি বাজার ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া আব্দুর রকিব ফারনের ছেলে লাহিন আলম যুক্তরাজ্য শাখা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি। তিনি নিজেকে তারেক রহমানের বডিগার্ড পরিচয় দেন। তার আরেক ছেলে বিএনপি নেতা ছয়ফুল আলম শাহিন। তিনি জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন।
তৃণমূলের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, টাকার বিনিময়ে প্রার্থী পাল্টে দেওয়া হচ্ছে এবং এতে রয়েছে লন্ডনের কানেকশন। লন্ডন থেকে অনেকেই নৌকার টিকিট কনফার্ম করে সিলেটে প্রার্থী হচ্ছেন।
এদিকে বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হয়েছিলেন পলাশ আফজাল। কিন্তু মনোনয়ন পেয়েছেন আব্দুস সালাম। তিলপাড়ায় ভোটে প্রথম হয়েছিলেন আহবাবুর রহমান খান। মনোনয়ন পেয়েছেন এমাদ উদ্দিন।
প্রার্থী পাল্টানোর ঘটনায় বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবের একটি ভিডিও বার্তা এখন এ দুই উপজেলায় আলোচনার শীর্ষে। তিনি জানিয়েছেন, সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের অভাবে নৌকা ফেল করে। বাছাই যদি সঠিকভাবে হয় তাহলে আমি মনে করি কোনো জায়গায় নৌকা হারার সম্ভাবনা নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো। আমরা তা স্বচ্ছতার সঙ্গে করে যাচ্ছি। কেন্দ্র থেকে যাকে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে আমরা তার পক্ষেই কাজ করছি।
আরআই/জেএস