অনার্স শেষ না করা জহিরের মাসিক আয় লাখ টাকা
দেশে বসেই জহিরুল ইসলাম আমেরিকান একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। রাশিদুল ইসলাম নামের এক প্রবাসী সঙ্গে গড়ে তুলেছেন কানাডাভিত্তিক আলাদা মার্কেটিং এজেন্সি। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইবার ও আপওয়ার্কে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
এখন মাসে তার আয় লাখ টাকার ওপরে। ২৩ পেরোনো জহির এরই মধ্যে নিজেকে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু তার এই যাত্রার শুরুটা ততটা সহজ ছিল না।
জহিরুল ইসলাম ফেনীর ছনুয়া এলাকার বাসিন্দা। পড়াশোনা ও কাজের সূত্রে তিনি বাস করেন চট্টগ্রাম শহরে। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম জাহাজের সহকারী মাস্টার ছিলেন। এখন অবসরে। তার মা হামিদা বেগম গৃহিণী। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জহির তৃতীয়।
পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন জহিরুল ইসলাম। সেই থেকে মনের কোণে স্বপ্ন আঁকেন, বড় হয়ে হবেন চিকিৎসক। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি না পেলেও এসএসসিতে পান জিপিএ-৫। ফেনীর ফাজিলপুর ডব্লিউ বি কাদরী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জহির এসএসসি পাস করেন ২০১৬ সালে। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রামের একটি কলেজে। ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করলেও কাঙ্ক্ষিত ফল মেলেনি। তাতে ফিকে হয়ে যায় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হন প্রাণিবিদ্যায়। করোনার সংকট না এলে এবার তার অনার্স তৃতীয় বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। একটা স্বপ্ন ভাঙলেও আরেকটা স্বপ্ন পূরণের পথে ঠিকই হাঁটছেন জহির।
নিজের এই স্বপ্নযাত্রা নিয়ে কথা হয় স্বপ্নবাজ এই যুবকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। সব সময় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ভাঙলেও তিনি দমে যাননি।
অনার্স ভর্তি হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন ফ্রিল্যান্সার হবেন। টিউশনির জমানো টাকায় কেনেন সেকেন্ডহ্যান্ড একটি ল্যাপটপ। সেই থেকে স্বপ্নযাত্রা শুরু। ইউটিউব ও গুগল ঘেঁটে বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করে দিন দিন নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন এসইও এবং ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন এক্সপার্ট। বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ভাষাগত ও যোগাযোগ দক্ষতাও অর্জন করেন।
কেবল নিজেই স্বাবলম্বী হননি, এই তরুণ তুর্কির হাত ধরে স্বাবলম্বী হয়েছেন আরও অনেকেই। তিনি জানান, মূলত পাঁচজনের দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। তাদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। একজন পাকিস্তানি। প্রত্যেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত অনলাইন উদ্যোক্তা।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রথম কাজ পাওয়ার গল্প শুনিয়ে জহির বলেন, ফাইবারে যুক্ত হওয়ার সপ্তাখানেক পর কাজ পেয়ে যান এক আমেরিকান ক্লায়েন্টের। সেটি ছিল অটোমোবাইল কোম্পানির লোকাল এসইও। মাস তিনেকের কাজে সন্তুষ্ট হন ক্লায়েন্ট। পরে জানতে পারেন, ক্লায়েন্ট আসলে মার্কেটিং এজেন্সির কর্ণধার। শেষে তাকে সেখানেই নিয়োগ দেন। এখন পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানেই যুক্ত রয়েছেন তিনি।
চূড়ান্ত সফলতা এখনো বাকি জানিয়ে জহির জানান, তিনি আরও অনেক দূর এগোতে চান। বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে নিজেকে আরও দক্ষ করে সাফল্যের চূড়ায় যেতে চান।
বছর তিনেক সময় ধরে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে জহির। এই জগতের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন। কথা হয় সেসব বিষয় নিয়েও। তিনি বলেন, দেশে ইন্টারনেটের ধীরগতি ফ্রিল্যান্সিংয়ে বড় সমস্যা। এ জন্য বায়ারদের সময়মতো কাজ বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে সামগ্রিকভাবে ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। তা ছাড়া পেমেন্ট গেটওয়েও আরেকটি প্রধান সমস্যা। দেশে পেপ্যাল চালু হলে এই সংকট থাকবে না বলে জানান তিনি।
তরুণ প্রজন্মের নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে জহির বলেন, ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়া অবারিত। এখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নতুনদের অবশ্য দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। অনেক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন না করে শুরুতে একটি বিশেষ দক্ষতা অর্জন জরুরি।
তরুণদের জন্য বড় সমস্যা ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট। অনেকেই সেটি ঠিকমতো করতে পারেন না। ফলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পান না। এই সংকট কাটাতে অবশ্যই ইংরেজিতে যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে। তা ছাড়া ধর্য ধরে লেগে থাকলে সাফল্য আসবে ঠিকই।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এনএ