মেয়ের মৃত্যুর পর খাতা থেকে চিরকুট পেল পরিবার
‘রফিকুল তুই স্কুলের ছাদে নিয়ে বিয়ের কথা বলে আমার........হাত দিয়েছিস। তোর বিরুদ্ধে আমার বাবা মামলা করায় আবার তুই আমাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করার হুমকি দিলি, কিন্তু সেই সুযোগ পাবি না। আজই দুনিয়া হতে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী। তোর বিচার আল্লাহ্ করবে। ইতি-............’।
এমন লেখার একটি চিরকুট জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে যৌন হয়রানির শিকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক স্কুলছাত্রী (১৬) আত্মহত্যার পর তার খাতার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। ওই ছাত্রীর পরিবার চিরকুটটি উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে। তবে চিরকুটটি নিহত ছাত্রীর নিজের হাতের লেখা কীনা, তা যাচাই করছে পুলিশ।
চিরকুট পাওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এর আগে মেয়েকে যৌন হয়রানির ঘটনায় গত ৮ নভেম্বর মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম (৪০) ও শাহিনুর ইসলামকে (৪০) আসামি করে ক্ষেতলাল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রফিকুল উপজেলার বাঘাপাড়া ও শাহিনুর বড়তারা গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে পরের মামলার ৩ নম্বর আসামি আব্দুর রাজ্জাককে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনিও একই গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছিল। যৌন হয়রানির ঘটনায় আমার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। এরমধ্যে প্রতিবেশীরা তাকে দেখলেই নানা কথা বলত। এসব মেনে নিতে না পেরে সে আত্মহত্যা করল। মেয়ের মৃত্যুর পর তার খাতার ভেতর থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। আমরা মেয়ের হাতের লেখার সঙ্গে চিরকুটের লেখা মিলিয়ে দেখেছি। চিরকুটটি আমার মেয়েরই লেখা। আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের সবার বিচার দাবি করছি।
ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নীরেন্দ্রনাথ মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিরকুটটি পুলিশ উদ্ধার করেনি। নিহত স্কুলছাত্রীর খাতার ভেতরে পরিবারের সদস্যরা চিরকুটটি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি ওই ছাত্রীর নিজের হাতে লেখা কীনা, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ক্ষেতলাল উপজেলার বাঘাপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় মাধ্যমিক স্কুলের অষ্টম শ্রেণির বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। গত ৭ নভেম্বর স্কুলের এসএসসি শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে ওই ছাত্রীও উপস্থিত ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে তার সঙ্গে বড়তারা গ্রামের শাহিনুর রহমানের দেখা হয়। শাহিনুর তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে স্কুলের পরিত্যক্ত ঘরের সামনে নামিয়ে দেয়। তখন বিকেল সাড়ে ৫টা বাজে।
এ সময় রফিকুল এসে ওই শিক্ষার্থীকে কৌশলে স্কুলের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। তখন মেয়েটি কান্না শুরু করলে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে রফিকুল পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ৮ নভেম্বর দুপুরে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রফিকুল ইসলাম ও শাহিনুর রহমানের নামে ক্ষেতলাল থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার বড়তারা গ্রামে নিজ বাড়িতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। ওই স্কুলছাত্রী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।
চম্পক কুমার/এমএএস