‘আপনারা ভোট না দিলে আমারে মারি পাকিস্তান পাঠাই দেবে’
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান ও তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হোসেন রানা ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, বিবেক-মেধা খাটিয়ে আপনারা ভোটটা আমারে দেবেন। ভোট না দিলে আমারে (আমাকে) মারি পাকিস্তান পাঠাই দেবে। যদি আপনারা আমারে রাখেন, তাহলে আপনারা ভোট দিয়ে আমারে এলাকায় রাখবেন।’
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শনিবার (২০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তিনি ইউনিয়নের আশারকোটা গ্রামে গণসংযোগকালে এসব কথা বলেন। তিনি ফেসবুক লাইভেও একই কথা বলেছেন।
হোসেন রানা নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গত ১৬ নভেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘোড়া প্রতীকে তিনি ভোটের মাঠে রয়েছেন।
গণসংযোগকালে হোসেন রানা বলেন, ‘এলোপাতাড়িভাবে আমরা নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য কল (গভীর নলকূপ) দিয়েছি। এক বাড়িতে ৮টা গেছে কল, আবার ৫০ বাড়িতে একটাও নাই। আমরা নতুন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রত্যেকটি বাড়ির গাঁডার আগে (প্রবেশ মুখ) একটা করে কলের ব্যবস্থা করে দেব। প্রত্যেকটি বাড়িতে একটা করে কল দিয়াম (দেব)। ভোট এখন আর কাটার সুযোগ নেই। ভোট হবে ইভিএমে। আপনাদের অনেকেই বলবে কেন্দ্রে যাইয়েন না। আপনারা কেন্দ্রে যাবেন। স্বচ্ছভাবে হাসিখুশিভাবে আপনারা ভোট দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এমপির (এমপি আনোয়ার হোসেন খান) নির্দেশনায় আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রত্যেকটি এলাকায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ভাতা কার্ড করে দেব। কোনো ঘরে ১০টা পায়, কোনো ঘরে পায় না। আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যবহারে যদি কোনো মনে কষ্ট থাকে, তা আমার ওপর রাইখেন না। জানি না আমার ভাগ্যে কি আছে? আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ভুল করা যাবে না। অনেক সময় কেন্দ্রের সামনে কিছু বেয়াদবরা বলবে- কেন্দ্রে ঝামেলা হবে। আসলে কোনো কিচ্ছু নাই। আমনেরাতো এ এলাকার মানুষ। এমননা আপনারা হাজীগঞ্জ, রামগঞ্জ থেকে আইছেন। যত কিছু হবে। ভোট একটা ঈমানি দায়িত্ব। ইসলামের একটা অংশ ভোট।
বক্তব্যের বিষয়টি স্বীকার করে হোসেন রানা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোহেল পাটওয়ারী আমাকে হুমকি দিয়েছে ভোটে না জিতলে আমাকে মেরে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবে। আমি সেটি জনগণের কাছে উপস্থাপন করেছি। সেখানে গণসংযোগকালে সোহেলের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে। এতে সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার প্রার্থী সোহেল পাটওয়ারী বলেন, রানাকে মারধর কিংবা পাকিস্তান পাঠানোর ব্যাপারে কখনোই কিছু বলা হয়নি। এটি তিনি নিজ থেকেই বলে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সময় মানুষকে তিনি (রানা) গালমন্দ করেছেন। এজন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, টিউবওয়েল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্বাচনী প্রচারণা আচরণবিধি লঙ্ঘন। হোসেন রানার এমন প্রচারণার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। নৌকার প্রার্থীর হুমকির বিষয়েও তিনি আমাকে অবগত করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ নভেম্বর নোয়াগাঁওসহ রামগঞ্জের ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নোয়াগাঁওয়ে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এ ইউনিয়নে সোহেল পাটওয়ারী ও হোসেন রানা ছাড়াও আরও তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা সময় নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর