পানিফলের কেজি ১৫ টাকা
নওগাঁয় বর্তমানে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন ফল চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। তেমনই একটি ফল হচ্ছে পানিফল। কৃষি প্রধান এই জেলায় সারা বছরই কিছু কিছু জমি ও বিলে হাঁটুসমান পানি থাকে। ফলে শীতকাল এলেই পানিফল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চাষিরা। কম খরচ, পরিশ্রম আর স্বল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় এই ফল চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে নওগাঁর চাষিদের।
সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলার খাগড়া বিল, দুর্গাপুর বিল এবং মরা বিলে দেখা যায়, আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে যখন জলাশয়গুলোতে পানি জমতে শুরু করে তখন পানিফলের চারা ছেড়ে দেওয়া হয়। এর তিন মাস পর (ভাদ্র মাস থেকে) গাছে ফল আসা শুরু করে। গত বছর পানি ফলের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আরও বেশি জমিতে পানিফল চাষ করছেন চাষিরা।
পাতার নিচে থোকায় থোকায় ধরে লাল, কালচে ও সবুজ রঙের পানিফল। শুরুতে ফল কম আসলেও বর্তমানে ফলের উৎপাদন বেড়েছে। শীতের কুঁয়াশা মাখা ভোরে পানিফল সংগ্রহ করতে জলাশয়, বিলে নামছেন চাষিরা। সেখান থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় চলছে পানিফল সংগ্রহ। এরপর সেখান থেকেই পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব ফল ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলাতেও সরবরাহ করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৫৫ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে।
পানিফল তুলছেন শ্রমিক মোহাম্মদ আলী, মোবারক এবং একরামুল হোসেন। তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখানে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাজিরা হিসেবে কাজ করি (চুক্তিভিত্তিক দিনমজুর)। প্রতিদিন সকালের নাস্তাসহ ৩৫০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। গাছ থেকে ফল তুলে নিয়ে সেগুলো পরিষ্কার করে গাড়িতে তুলে দিতে হয়। এই ফলগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
সদর উপজেলার চকমুক্তার গ্রামের পানিফল চাষি আজিজুল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৬ বিঘা জমি এক বছরের জন্য ইজারা (লিজ) নিয়েছি। ইজারাসহ পানিফল চাষ করতে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার খরচ হয়েছে। এখন বাজারে পানিফল তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। প্রতিদিন এই ফল উঠানোর জন্য ১০ জন শ্রমিক প্রয়োজন পড়ে। বাজারে যে ফলের দাম শ্রমিককে মজুরি দিতে আমার সব শেষ। তবে প্রথম দিকে ভালো দাম পেয়েছি। এখন বাজারে ফলের দাম নেই।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় এ বছর ৬০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। পানিফল একটা জনপ্রিয় ফল। কারণ এই ফলটা অসময়ে হয়। এই সময় নিচু জমিতে ধানের আবাদ বা অন্য কোনো ফসল হয় না। পানি জমে থাকে সেক্ষেত্রে এটা একটি উপরকারী ফল। গত বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা বেশি চাষ হয়েছে। এ বছর ভালো ফলন এবং উৎপাদন হয়েছে। এই ফল খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় মানুষ বেশ আগ্রহী। প্রতি কেজি পানিফলের দাম বর্তমানে ১৫-২০ টাকা। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে।
দেলোয়ার হোসেন/এসপি