খাতায় অপমানের বিবরণ লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে স্বর্ণের চেইন চুরির অপবাদ সইতে না পেরে চিরকুট লিখে সুবর্ণা আক্তার (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। গতকাল শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের দক্ষিণ সাহেদল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার আগে নিজের স্কুলের খাতায় ৮ পৃষ্ঠার চিরকুটে অপমানের বিবরণ লিখে চুরির অপরাধ অস্বীকার করেছে সুবর্ণা। পাশাপাশি এ রকম ঘটনা যেন আর কারও জীবনে না ঘটে সেজন্য বিচার চেয়ে সে লেখেছে, এ ঘটনার বিচার না হলে তার আত্মা শান্তি পাবে না।
সুবর্ণা উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের দক্ষিণ সাহেদল গ্রামের হাজী আকবর হোসেনের মেয়ে। সে গলাচিপা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার আলামত হিসেবে ওই ৮ পৃষ্ঠার চিরকুট লেখা খাতা ও মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা ভিডিও জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। পাশাপাশি মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠায়।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর সুবর্ণা আক্তারের বাড়ির পাশের শিশু শিখন বিদ্যালয় থেকে খসরু মিয়ার ছেলের নাতনির স্বর্ণের চেইন চুরি হয়। তখন সুবর্ণা আক্তারকে সন্দেহ করা হয়। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নুরুন্নাহার মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে সুবর্ণাদের বাড়িতে যান। তখন ওই মেয়ের বর্ণনা অনুযায়ী নিশ্চিত হওয়া যায় যে সুবর্ণা চেইন চুরির সঙ্গে জড়িত না।
এ ঘটনার পর সুবর্ণার বাবা হাজী আকবর হোসেন স্থানীয় আশুতিয়া বাজারে গেলে সেখানে খসরু, লোকমান ও আব্দুল হামিদ নামে তিনজন তাকে মারধর করেন। ওইদিন রাতে ২৫ থেকে ৩০ জন লোক নিয়ে সুবর্ণাদের বাড়িতে এসে হামলা চালান। এছাড়াও সুবর্ণা স্কুলে যাওয়া-আসার পথে মুন্না নামে এক যুবক তাকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল কথা বলে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।
এ নিয়ে স্থানীয় মাতব্বরদের শরণাপন্ন হলে খসরু মিয়া স্বর্ণের চেইন বাবদ সুবর্ণার পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এসব ঘটনা সইতে না পেরে অবশেষে লোকলজ্জায় সুবর্ণা আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি পরিবারের।
সুবর্ণার মা হালিমা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে চুরির অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আত্মহত্যার প্ররোচনার আলামত হিসেবে ওই ৮ পৃষ্ঠার চিরকুট লেখা খাতা ও মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা ভিডিও জব্দ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ না করায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়নি। মরদেহ দাফন শেষে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে সুবর্ণার পরিবার।
এসকে রাসেল/আরএআর