চোরাই ইজিবাইক খুলে বিক্রি করেও পার পেলেন না তারা
চালককে খুন করে ইজিবাইক নিয়ে গিয়ে খুলে বিক্রি করেছিলেন চোরেরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার এক মাস পর রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ সেই ইজিবাইকের যন্ত্রাংশ উদ্ধার করেছে।
গতকাল শনিবার (৬ নভেম্বর) নাটোরের লালপুর এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে এসব যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় গ্যারেজ মালিক নাটোরের লালপুর থানার মহরকয়া এলাকার দিরাজ মন্ডলের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩৫)।
তার আগে চুরি ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত জেলার চারঘাট থানার মিয়াপাড়া এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে আল-আমিন (২১) এবং বাঘা থানার মালি আনদাহো গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে মো. জনিকে (২১) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কার্যালয়ে আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক এসব তথ্য জানান। এ সময় নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমপি কমিশনার জানান, গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাত ১টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া এলাকার নেসকো অফিসের পাশে খুন হন ইজিবাইক চালক আব্দুল কাদের (৫৫)। পুলিশ তার মরদেহ পেলেও সন্ধান মেলেনি ইজিবাইকটির। এ ঘটনায় পরদিন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছেলে সাইফুল ইসলাম।
ঘটনার পর ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। এরপর আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় নগরজুড়ে বসানো সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করা হয়। তাতেই শনাক্ত হন জড়িতরা।
অবশেষে গত ৬ নভেম্বর মূল অভিযুক্ত আল-আমিনকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুসহ চারঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একে একে জনিকে বাঘা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাটোরের লালপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক আরিফুলকে। তার কাছেই পাওয়া যায় চোরাই ইজিবাইকের যন্ত্রাংশ।
আসামিদের বরাত দিয়ে আবু কালাম সিদ্দিক জানান, এর আগে অটোরিকশা ছিনতাইয়ে গিয়েছিলেন আল-আমিন ও এ ঘটনায় পলাতক আসামি কাউসার (২০)। ওই সময় কাউসার পালিয়ে গেলেও ধরা পড়েন আল-আমিন। গণপিটুনিরও শিকার হন তিনি। তাকে চারঘাট থানায় সোপর্দ করা হয়। ১৫ হাজার টাকায় পরে ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়।
জরিমানার অর্থ সংগ্রহ করতেই তারা ৬ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা আব্দুল কাদেরের ইজিবাইক ভাড়া নেন। পরে সাগরপাড়া এলাকার নেসবো অফিস সংলগ্ন নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে চালককে গলাকেটে হত্যার পর ইজিবাইক নিয়ে নিয়ে যান।
পরে সেটি গ্যারেজ মালিক আরিফুলের কাছে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আরিফুল নগদ ২২ হাজার টাকা দেন। সেই টাকা থেকে জরিমানা বাবদ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যান কাউসার। বাকি টাকা জড়িত অন্যরা ভাগাভাগি করে নেন। হত্যাকাণ্ডের পরদিনই কাউসার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পালিয়ে যান। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান আরএমপি কমিশনার।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর