তিন ঘণ্টায় ৩ সন্তানের মৃত্যু, অভাবে ঢাকায় নিতে পারেননি বাবা
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার সকালে একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। তাদের মধ্যে বুধবার (৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টা, আড়াইটা এবং ৩টার দিকে স্ক্যানো ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ছেলে ও দুই কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
প্রথমবারের মতো পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন প্রসূতি সাদিয়া খাতুন (২৪)। গর্ভধারণের পাঁচ মাসের মাথায় জন্ম হওয়ায় শিশুদের ওজন কম হয়েছে। বর্তমানে মা সুস্থ থাকলেও বাকি দুই কন্যা শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, নবজাতকরা প্রথম থেকেই ঝুঁকিতে ছিল। এখনো ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ওজন কম হওয়ার কারণে এক ছেলে ও দুই মেয়ে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বাকিদের সুস্থ করে তোলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শিশুদের বাবা সোহেল রানা বলেন, আমার এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান মারা গেছে। খুবই কষ্ট লাগছে। আর বাকি দুই মেয়ে শিশুও ঝুঁকিতে আছে। স্ক্যানো ওয়ার্ডে তাদের অক্সিজেন চলছে। তবে তাদের মা সুস্থ আছে। শিশুর ওজন কম হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থের অভাবে ঢাকায় নিতে পারিনি।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই শিশুদের দাদা সামাদ আলী বলেন, তিন শিশু মারা গেছে। তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গ্রামের গোরস্থানে আলাদাভাবে তাদের দাফন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দরিদ্র, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। ছেলে সোহেলের চা দোকানের আয়ে সংসার চলে। টাকার অভাবে শিশুদের ঢাকায় নিয়ে যেতে পারিনি। যদিও চিকিৎসকরা প্রথম থেকেই ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। টাকার অভাব না থাকলে হয়তো শিশুদের ঢাকায় নিয়ে যেতে পারতাম। সবগুলো শিশু একসঙ্গে বেড়ে উঠলে ভালো লাগতো।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশরাফুল আলম বলেন, গর্ভধারণের পাঁচ মাসের মাথায় জন্ম নেওয়া শিশুদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। বাচ্চাদের ওজন ৪৩০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রামের মধ্যে।
তিনি আরও বলেন, জন্ম নেওয়া শিশুদের তিনজন মরা গেছে। সকালে একমাত্র শিশু সন্তানটি ও বিকেলে আরও দুই কন্যা সন্তান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গ্রামের কলেজপাড়া এলাকার সোহেল রানার স্ত্রী সাদিয়ার পাঁচ থেকে ছয় মাসের মাথায় হঠাৎ প্রসব ব্যথা উঠে। পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে একসঙ্গে পাঁচ নবজাতকের জন্ম দেন তিনি।
এদিকে, পাঁচ সন্তানের একসঙ্গে জন্ম হওয়ার বিষয়টি ছিল অনেক ঝুঁকির। তবে এখন নবজাতকের মা সুস্থ থাকলেও ওজন কম হওয়ায় বাকি দুই নবজাতক রয়েছে ঝুঁকিতে।
রাজু আহমেদ/এমএএস