‘নৌকার বিপক্ষে ভোট চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না’
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ভোট চাওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম তপাদার। সোমবার (১ নভেম্বর) রাতে একটি নির্বাচনী জনসভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় তিনি নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে যে ভোট চাইবে, তাকে অবরুদ্ধ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) আবুল হাসেম তপাদারের দেওয়া ওই বক্তব্যের ৬ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদরের ডোমসার ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মিজান মোহাম্মদ খান। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান।
সোমবার রাতে ডোমসারের ভর্তাইসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম তপাদার।
তিনি বলেন, এই মিটিংয়ের পর আপনার প্রস্তুত হয়ে থাকেন, আমরা নির্বাচন জানি। নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী মজিবরের পক্ষে যে ভোট চাইবে, কালকে থেকে তাদের তালিকা করে আমাকে দেবেন। তালিকা তালিকা তালিকা চাই। তালিকা দেবেন। আমি এ জনসভায় বলতে চাই, যে যে মজিবরের পক্ষে ভোট চাইবেন, নৌকার বিপক্ষে তালিকা করে দেবেন। সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমরা নিব। এই মঞ্চের নেতৃবৃন্দ নেবেন। কোনো ভোট চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। আমার কথা পরিষ্কার।
আবুল হাসেম তপাদার আরও বলেন, আমার মাননীয় সংসদ সদস্য ও আমার মধ্যে চুল পরিমাণ বিভক্তি নাই। আমি যা বলি তিনি তা করেন, তিনি যা বলেন আমি তা শুনি। আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তিনজন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা চাই এই ডোমসারের মাটিতে কোথাকার মজিবর, আমি চিনি না বিদ্রোহীকে। আওয়ামী লীগের ঠিকানা আছে, শেখ হাসিনার ঠিকানা আছে, আমাদের সকলের ঠিকানা আছে। ওর ঠিকানা কে? ওর কি চেক দেবেন। নেতা যেখানে কর্মীরা সেখানে। কর্মী যেখানে, ভোট সেখানে। কর্মী নাই, ভোট নাই। তোর নেতা নাই, কর্মী নাই-ভোট কোথায়? একটা কর্মী ঘরে বসে থাকবেন না। আমরা হুকুম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথাকার মজিবর, ওরেসহ ভোট চাইতে দেওয়া হবে না। হবে না, হবে না। আমরা জীবন দিয়ে হলেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা বিজয়ী করব।
এদিকে এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম তাপাদারের মুঠোফোনে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এদিকে ডোমসার ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান বলেন, আমি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। ভোটের মাঠে যে জনগণের ভোটে বিজয়ী হবে সে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে। নির্বাচন করার কারণে আমাকে ও আমার কর্মীদেরকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হচ্ছে। আমাকে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে দিচ্ছে না। শত শত মানুষের সামনে জনসভা করে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার সোহরাব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনে যে যার মতো করে নির্বাচনীবিধি মেনে প্রচারণা চালাবে। আমার কাছে এখনও কেউ হুমকি-ধমকির বিষয়ে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর