গৃহপরিচারিকাকে দিতেন খুনতির ছ্যাঁকা, মুখে পুরে দিতেন গামছা
রাজধানী খিলক্ষেত এলাকার একটি বাসায় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের মরিয়ম (ছদ্মনাম) নামে এক ৯ বছর বয়সী গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত গৃহকর্তা মিঠুকে তার বাসা থেকে আটক করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। তবে আরেক অভিযুক্ত মিঠুর স্ত্রী পলাতক আছেন।
এর আগে শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে ওই গৃহপরিচারিকার মা মারজাহান খাতুন (ছদ্মনাম) সাঁথিয়া থেকে ঢাকার গিয়ে খিলক্ষেত থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
বিষয়টি শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামিমুল ইসলাম।
এদিকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মিঠুর মায়ের দাবি, নির্যাতন নয়, শিশুটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে।
খিলক্ষেত থানা পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আবু মিয়া (ছদ্মনাম) দ্বিতীয় বিয়ে করার পর বাড়ি ছাড়েন। এতে প্রথম স্ত্রী মারজাহান খাতুন (৪৫) ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে বিপদে পড়েন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও অভাবের সংসারের কারণে বাকি দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান কাজের সন্ধানে।
তিন বছর আগে আবার গ্রামে ফিরে আসেন। তারপর মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন মারজাহান। এতেও সংসারের অভাব দূর না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শিশু মেয়ে মরিয়মকে সাঁথিয়া উপজেলার রায়েকমারী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মিঠুর ঢাকার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠান। তবে কিছুদিন পর থেকেই মিঠুর স্ত্রী শাপলা খাতুনের নির্যাতন শুরু হয় শিশুটির ওপর। তিনি তাকে মারধর ও গরম খুনতির ছ্যাঁকা দিতেন এবং কান্নার শব্দ যেন বাইরে না যায়, সে জন্য শিশুটির মুখে গামছা পুরে দিতেন। বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের কথা কাউকে যেন না বলে, সে জন্য মেরে ফেলার হুমকি দিতেন।
অভিযোগে আরও জানা যায়, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) শিশুটিকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন মিঠু ও তার স্ত্রী শাপলা। এরপর মিঠু তার মায়ের মাধ্যমে শিশুটিকে সাঁথিয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেন। বিষয়টি সে তার মাকে জানালে তারা সাঁথিয়া থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন। তারপর থানা পুলিশ ঢাকার খিলক্ষেত থানায় যোগাযোগ করে। পুলিশ এ বিষয়ে মিঠুকে আটক করলেও তার স্ত্রী পালিয়ে যান।
বিষয়টি জানতে সরেজমিনে শিশু মরিয়মের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার দুই হাত, পিঠ ও মুখে নির্যাতনের চিহ্ন। খুনতির ছ্যাঁকার দাগ এখনো স্পষ্ট। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বাড়িতে চিকিৎসা চলছে তার। ঠিকমতো কথা বলতে পারে না সে।
তবু অভিযোগ করে মরিয়ম জানায়, কোনো কাজ করতে বা নির্দেশ পালন করতে দেরি হলেই মিঠুর স্ত্রী শাপলা শুরু করতেন অসহনীয় অত্যাচার। শব্দ বাইরে না যায়, সে জন্য তার মুখে গামছা পুরে দিতেন। মরিয়ম বাড়ি চলে আসার কথা বললে ক্ষিপ্ত হতেন শাপলা। তার মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দিতেন না তিনি। এই নির্যাতনের কথা কাউকে যেন না জানায়, সে জন্য তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি শাপলা শিখিয়ে দিয়েছিলেন তাকে যে বাড়িতে এসে যেন বলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে সে।
এ বিষয়ে মরিয়মের মা মারজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিঠুর মা সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া ম্যাডাম (মায়া খাতুন) ভরণপোষণ ও বিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে আমার মেয়েকে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় তার ছেলের বাসায় পাঠান। তিনি মাসে মাসে ঢাকায় গেলেও আমার মেয়েকে অত্যাচারের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি এবং তা গোপন রাখেন। আমি আমার মেয়েকে চারটা ভাতের জন্য কাজে পাঠিয়েছিলাম, অত্যাচারের জন্য পাঠাইনি। আমার এর উপযুক্ত বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মিঠু আটক থাকায় এবং তার স্ত্রী শাপলা পলাতক থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে মিঠুর মা ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জান্নাতুলকে আমি কাজের জন্য ঢাকায় আমার ছেলের বাসায় পাঠাই। সেখানে সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। কিন্তু ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে হাসপাতালে নেননি কেন, কোনো উত্তর না দিয়ে প্রতিবেদকের ফোন কেটে দেন।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় মামলা সেখানেই করতে হবে। আমি জান্নাতুলের পরিবারকে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। সম্ভবত সেখানে অভিযোগ দিয়েছে। একজন আটকও হয়েছে।
খিলক্ষেত থানা পুলিশের এসআই শামিমুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। মামলা নথিভুক্ত করতে কাজ চলমান রয়েছে। তার স্ত্রীকেও আটকের চেষ্টা চলছে।
রাকিব হাসনাত/এনএ