আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবার পূর্বাচলের খোলা মাঠে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এখন আর ব্যস্ততম ঢাকায় নয়। এবার বাণিজ্য মেলা স্থায়ীভাবে চলবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে। অপেক্ষার প্রহর শেষে করোনা মহামারি পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
এর স্থায়ী প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত রয়েছে রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পের পূর্বাচলের ৪নং সেক্টরে। গত ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এ বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেছেন। ফলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন নামে এ স্থায়ী প্যাভিলিয়ন দেখতে প্রতিদিন জড়ো হয় হাজারো দর্শনার্থী। এবারই প্রথম গ্রামের লোকজন সরাসরি সুযোগ পাচ্ছেন এ মেলার সুবিধা নিতে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের পাশে পূর্বাচলের এ নব নির্মিত অবকাঠামোটিতে সর্বমোট বরাদ্দকৃত জমির পরিমাণ ২৬.১০ একর। সেন্টারের মোট ফ্লোর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার, এক্সিবিশন ভবনের মোট ফ্লোর স্পেস ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার এবং এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার।
ভবনটিতে পার্কিংয়ের জন্য দোতালার স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার। যেখানে প্রায় এক সঙ্গে ৫০০টি গাড়ি এবং ভবনটির সামনের জায়গায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ থাকবে। তাছাড়াও এক্সিবিশন হলে ৯.৬৭ বর্গমিটার করে ৮০০টি স্টল থাকবে যেখানে দেশি-বিদেশি পণ্যের এক্সিবিশন চলবে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ৪৭৩ আসন বিশিষ্ট একটি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসন বিশিষ্ট কনফারেন্স রুম, ৬টি মিটিং রুম, ৫০০ আসন বিশিষ্ট ক্যাফেটোরিয়া বা ফুড কোর্ট, নামাজের স্পেস, দুটি অফিস রুম, মেডিকেল বুথ, গেস্ট রুম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্টোর রুম, সেন্ট্রাল এসি, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও অটোমেটিক গেট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টি নন্দন এ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি বাংলাদেশ এবং চীনের যৌথ অর্থায়নে চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন নির্মাণ করেন। যার অবকাঠামোগত সকল কাজ গত বছরের ৩০ নভেম্বর সম্পন্ন হয়েছিল। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে এ সেন্টার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান (প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা) এ.এইচ.এম আহসান বলেন, এতদিন রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এ বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় গ্রামের লোকেরা তেমন সুযোগ পেত না। এখন এ মেলার আয়োজন নতুন শহর প্রকল্পে হওয়ায় রাজধানী ছাড়াও নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ গ্রামের লাখো মানুষ সহজেই সুবিধা ভোগ করবেন। কারণে এ মেলা এবার খোলা মাঠে স্থায়ী প্যাভিলিয়নে হচ্ছে।
স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা ছাড়াও বিদেশি পণ্য আমদানি রফতানিকারকরা সরাসরি বিশেষ সুবিধা ভোগ করবেন। সারা বছর এখানে মেলা হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী করতে পারবেন। সারা বছরই প্রান্তবন্ত থাকবে এ মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন। যার সুফল গ্রামের লোকেরাই বেশি ভোগ করবে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাহউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই এমন দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ার অন্যতম। তবে স্থানীয় উদ্যোক্তারা এ মেলায় স্টল পেলে আরো অর্থবহ হবে। যদিও গ্রামের লোকেরাই এবার বেশি সুবিধা পাবেন। কারণ এ মেলার অবস্থান শতাধিক গ্রাম ঘিরে। এর আশপাশে গ্রামীণ জনপদ থাকায় আন্তর্জাতিক এ মেলায় অংশ নিতে পারবেন যে কেউ।
এ বিষয়ে মধূখালী এলাকার বাসিন্দা মাহিরা তাসফি প্রভা বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলা হবে জেনে খুবই ভালো লাগছে। তবে এখনো রাজধানী থেকে যাতায়াতের জন্য একমাত্র ৩শ ফুট সড়ক মেরামত সম্ভব হয়নি। তাই শহর থেকে এ মেলায় আসা লোকজনের জন্য কষ্টসাধ্য হতে পারে। এছাড়াও ঢাকা বাইপাস সড়কের ৪ লেনে উন্নীতকরণও চলছে একই সময়ে। ফলে যাতায়াত ভোগান্তি হয়তো থেকে যাবে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের নজর দারির দাবি জানান তিনি।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে বাস্তবায়ন শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০০৫ সালে।
এদিকে, রূপগঞ্জ অংশের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয় ২০০৩ সালে। আর গাজীপুর অংশের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয় ২০০৯ সালে। এরপর সময় বাড়িয়ে ২০১০ সালে শেষ করার কথা থাকলেও আরেক দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে এ প্রকল্পের। যদিও ৩৩টি সেক্টরের মধ্যে ১৫-১৬টি সেক্টর বাড়ি করার মতো উপযোগী হয়েছে বলে রাজউক দাবি করছে।
প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ২৭৭ দশমিক ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৩৬ একর ও গাজীপুর অংশে ১৫০০ একর জমি। যা ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বাকি ১৫০ একর জমি ঢাকা জেলার খিলক্ষেত থানায় কুড়িল ফ্লাইওভার ও লিংক রোড নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্পটিতে বিভিন্ন আকারের মোট ২৭ হাজার ১৭১টি প্লট এবং ৬২ হাজার অ্যাপার্টমেন্টের সুযোগ রয়েছে। কাজ শতভাগ শেষ হয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান হলে এ পূর্বচাল প্রকল্প হবে ঢাকা বিভাগের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা।
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া/এমএএস