পাটুরিয়ায় উল্টে যাওয়া ফেরি থেকে কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার
পাটুরিয়ায় ৫ নম্বর ঘাটে দুর্ঘটনাকবলিত ফেরি আমানত শাহের ভেতর থেকে আমানত নামের একটি কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা এটি উদ্ধার করে। এ নিয়ে ফেরির ভেতর থেকে ৪টি ট্রাক ও একটি কাভার্ড ভ্যানসহ মোট ৫টি যানবাহন উদ্ধার করা হয়।
গতকাল সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৭ যানবাহনসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয় ফেরিটি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেরিটি পাটুরিয়ার ৫ নং ঘাট পন্টুনে এসে নোঙর করে। এর পরপরই ফেরি থেকে তিনটি গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে নামার পরেই যানবাহনসহ উল্টে যায়।
এ ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযানে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি ডুবুরি দল কাজ শুরু করে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ সাময়িকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করে হামজা। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে রো রো ফেরি আমানত শাহ ঘাটে নোঙর করার পরপরই ১৪টি যানবাহন নিয়ে উল্টে যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনার পরেই উদ্ধার অভিযানে আসে জাহাজ হামজা। তবে উল্টে যাওয়া ফেরটির বডির ওজন ৩৮০ টন আর উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। যে কারণে হামজা পক্ষে এ ফেরিটি উদ্ধার সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ফেরিঘাট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ডুবে যাওয়া আমানত শাহ ফেরি উদ্ধার অভিযানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য চাঁদপুর থেকে ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় রওনা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যয় জাহাজটি কখন পাটুরিয়ায় এসে পৌঁছাবে ও উদ্ধার অভিযান যুক্ত হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমানত শাহ নামের ফেরিটি ১৯৭৯ সালে আরিচা ফেরিঘাটে যুক্ত হয়েছিল। ৪ মাস আগে ফেরিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মেরামত শেষে পাটুরিয়ায় নৌবহরে যুক্ত হয়। সম্প্রতি ফেরিটিতে সমস্যা দেখা দিলে পাটুরিয়ায় মধুমতি ভাসমান কারখানায় মেরামতে কথা ছিল।
কিন্তু তার আগেই ঘটে গেলে দুর্ঘটনা। গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৭টি যানবাহন আর কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এসে নোঙর করার পরপরই উল্টে যায় ফেরি আমানত শাহ। তবে কী কারণে ফেরিটি যানবাহনসহ উল্টে গেল, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার পরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সানোয়ারুল হককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান জানান, নৌ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) সুলতান আব্দুল হামিদকে প্রধান করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির এজিএম (মেরিন) আব্দুস সাত্তার জানান, ফেরি আমানত শাহ ৪০ বছর আগের। দীর্ঘদিন ধরে নৌপথ চলছে ফেরিটি। মাঝেমধ্যে হালকা সমস্যা হলে ভাসমান কারখানায় মেরামত করা হতো। তবে হামজার উদ্ধার ক্ষমতা ৬০ টন, আর ফেরিটির ওজন ৪০০ টনের বেশি। ফলে উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হতে পারে। উদ্ধারকাজে চাঁদপুর থেকে প্রত্যয় নামে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ রওনা দিয়েছে। এটির উদ্ধারের সক্ষমতা ২৫০ টন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চলছে। আজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। দুটি টিম উদ্ধারকাজ করছে। ঢাকা থেকে ৩টি টিমসহ মোট ৫টি টিম কাজ করছে।
সোহেল হোসেন/এমএসআর