সালথায় নির্বাচনী সংঘর্ষে একজন নিহত, ৮০ বাড়িঘর ভাঙচুর
ফরিদপুরের সালথায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল শনিবার (২৩ অক্টোবর) একজন নিহত হওয়ার পরও এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
রোববার (২৪ অক্টোবর) সকাল ও দুপুরে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে। ওই এলাকার নারী ও শিশুরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ ঘটনায় সালথা থানা পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেফতার করে বিকেলে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবারের (২৩ অক্টোবর) সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে সালথা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। আর নিহতের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
এদিকে, গতকাল শনিবারের সংঘর্ষে নিহত মারিজ শিকদারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে মারিজ ছিল মেজ। তার স্ত্রীর নাম জুঁই আকতার। মুসলিমা ইসলাম নামে তাদের দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সবাই শোকে পাথর হয়ে বসে বসে কান্নাকাটি করছেন। দুই বছরের শিশুকণ্যা বাবা হারানোর কথা না বুঝলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের কান্না দেখে সেও স্বজনদের কোলে কান্নাকাটি করছে। গতকাল থেকে সে কিছু খেতেও চাচ্ছে না। পরিবারের অন্য সদস্যরাও নির্বাক হয়ে রয়েছে।
আর মারিজের মৃত্যদেহ বিকেলে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কাজ শেষ হয়েছে।
নিহত মারিজের বোন শিল্পী আকতার ভাইকে হারিয়ে নানান স্মৃতি স্মরণ করে কান্নাকাটি করছেন।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মারিজ অন্যের জমিতে কাজ করে তার ছোট্ট সংসার চালাতেন। যাদের জন্য আমার ভাইটা মারা গেল তারা কী ওর সংসার চালানোর খরচ দেবে? দুই বছরের বাচ্চা নিয়ে এখন আমার ভাবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কার কাছে হাত পাতবে? আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক মারিজ নিহত হওয়ার পর আজ সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের একাধিক বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। মারিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর সরকার দলীয় প্রার্থীর পুরুষ সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সুযোগে শনিবার সারারাত ও রোববার সকাল থেকে দুপুরে তাদের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়।
ভাঙচুর করা হয় যদুনন্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা সংসদ উপনেতার সাবেক এপিএস আবু বক্কর সিদ্দিকী, ইউপি সদস্য ইমরুল খান ও তোরাপ হোসেনের বাড়িঘরসহ অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি বসতঘর। লণ্ডভণ্ড করা হয়েছে ঘরে থাকা আসবাবপত্র। লুটপাট করা হয় গরু-ছাগলসহ মালামাল। বর্তমানে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে এসব বাড়ির নারী ও শিশুরা।
সালথা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, দুইপক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এজন্য পুলিশ বাদী হয়েও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুইপক্ষকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আটক ১৫ জনকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার বিকেলে আদতালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকায় উত্তেজনা চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সালথার যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আ.লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আব্দুর রব মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার বিপরীতে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ইউনিয়ন আ.লীগের কর্মী গ্রাম্য মাতবর মো. রফিক মোল্লা ও উপজেলা আ.লীগের সদস্য নুরজ্জামান।
রফিক মোল্লা ও নুরজ্জামান খারদিয়া এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে একই দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাদের বাড়িও একই গ্রামে। গত এক মাস আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে রফিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নুরজ্জামান যোগ দেন নৌকা মনোনীত প্রার্থী রব মোল্লা ও তার সমর্থক ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়ার দলে।
এরই জের ধরে গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খারদিয়া এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মারিজ সিকদার নামে একজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ২০ জন। পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড, ৮টি কাঁদানে গ্যাসের সেল ও শর্টগানের ৩৬টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জহির হোসেন/এমএএস