নীলফামারীর রোমেল এখন গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
নীলফামারীর ছেলে রোমেল শাহারিয়ার। ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেন ২০০৬ সালে। এরপর সিএ করতে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করেন ২০১২ সালে। বেশ কয়েকটি আইটি কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সফলভাবে শেষ করেন বিভিন্ন আইটি প্রফেশনাল কোর্স।
রোমেল শাহরিয়ার এবার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলে। গত ১০ অক্টোবর তাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। আগামী ১ নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত গুগলের হেড অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে লকার প্রজেক্টে যোগ দেবেন তিনি।
নীলফামারী সদর উপজেলার প্রগতি পাড়া এলাকার মৃত. ডা. সৈয়দুল আলমের ছেলে রোমেল। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। ৭ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর নীলফামারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের কাছে বড় হন তিনি।
১৯৯৯ সালে নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০১ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে স্টুডেন্ট ভিসায় চলে যান লন্ডনে সিএ পড়তে। কিছুদিনে মাথায় ডিভি লটারির মাধ্যমে সস্ত্রীক পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে প্রথমে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১২ সালে অটোমেশন টেস্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন ডাইরেক্ট টিভি নামে একটি গণমাধ্যমে। এরপর থেকে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন রোমেল। আইটি প্রফেশনাল হিসাবে বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি।
রোমেল শাহারিয়ার বলেন, আমার এ জার্নিটা সহজ ছিল না। এর পেছনে ছিল অনেক ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম আর ডেডিকেশন। আমি আসলে কখনো চিন্তা করিনি গুগলে আমার মতো নন সিএসই ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলে জব পাবে। বাংলাদেশের যে গুটিকয়েক ছেলে গুগলে জব করছে তারা সবাই বুয়েটের ছাত্র।
তিনি বলেন, এ চাকরির জন্য আমার চার রাউন্ডে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমাকে উচ্চমানের ছাত্রদের সঙ্গে কম্পিটিশন করতে হয়েছে। যাদের সবাই সিএসইর ছাত্র। সবচেয়ে মজার ছিল ফাইনাল রাউন্ড বা প্যানেল ইন্টারভিউ। মোট ৫ জন মিলে আমার ইন্টারভিউ নেয়। যার প্রশ্নগুলো সবই ছিল সিনারিও বেসড সমস্যা সমাধান। মোট ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট চলে সেই ইন্টারভিউ। আমার জীবনের এটা ছিল বেস্ট ইন্টারভিউ। যার ফল পরের সপ্তাহে আমি পেলাম।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মানবিক বিভাগের ছেলে মেয়েরা কখনো ডাক্তার হতে পারে না। সেই সিস্টেমই নেই, ঠিক তেমনি কমার্সের ছেলে মেয়েরা বুয়েটে পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কিন্তু বিদেশে সেটা কাজ করে না যদি আপনার যোগ্যতা থাকে আপনি ইচ্ছা করলে ডাক্তারি পড়তে পারবেন আর আমার মতো কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড হয়েও কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করতে পারবেন। যদি আপনি পরিশ্রম করতে পারেন। এখানে আপনার দক্ষতা আগে দেখা হবে তারপর সার্টিফিকেট।
নীলফামারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, যদিও রোমেল আমার ছোট ভাইয়ের সন্তান, আমি তাকে নিজের সন্তান হিসেবেই জানি। রোমেল ছোটবেলা থেকেই খুবেই মেধাবী ছিল। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পড়াশোনা করলেও তার নিজস্ব চেষ্টায় সে যে অসাধ্য সাধন করেছে তা প্রশংসনীয়।
নীলফামারী/এসকেডি