আত্মরক্ষায় কারাতে শিখছে ভোলার কিশোরীরা
‘আর নয় বাল্যবিয়ে, এগিয়ে যাব স্বপ্ন নিয়ে’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার কিশোরীরা নিচ্ছে কারাতে প্রশিক্ষণ। সোমবার (১৮ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদের নতুন অডিটোরিয়াম রুমে দেখা যায় এমনি চিত্র।
আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, বখাটে ও উত্ত্যক্তকারীদের লাগামহীন বখাটেপনায় শহর-গ্রামসহ সব জায়গায়ই বিভিন্ন বয়সী তরুণী, কিশোরী ও নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সর্বক্ষেত্রেই আসা-যাওয়ার পথে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীদের। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দিনের পর দিন বখাটেদের বেহায়াপনা সহ্য করে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ আবার আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এই নির্যাতনের লাগাম টানতে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার আর্থিক সহযোগিতায় ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহায়তায় দেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন। প্রশিক্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক কিশোরী অংশগ্রহণ করছে।
কথা হয় কারাতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কলেজ শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার বলেন, নিজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই এখানে আসা। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাসী মনে করছি। এখন আর আমার একা চলতে ভয় হবে না।
কথা হয় স্কুল শিক্ষার্থী তৃষা নামের এক প্রশিক্ষণার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার নিজের আত্মরক্ষার জন্য এই কারাতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি। এখানে এসে সবার সঙ্গে মিশে নিজের মনে অনেক সাহস যুগিয়েছি।
মেয়েদের নিজের আত্মরক্ষার জন্য কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। রাস্তা ঘাটে একা কোনো মেয়ে চলাচলে ভয় পাবে না। পাশাপাশি বখাটেরা ইভটিজিং করার সাহস পাবে না। নিজেদের বাল্যবিয়ে সাহস করে নিজেরাই বন্ধ করতে সক্ষম হব বলেন তিনি।
এদিকে কারাতে প্রশিক্ষক নাহিদ হোসেন জানান, আমরা প্রথমত কিক-পান্স-ব্লোক এগুলোই শিখাচ্ছি। যাতে কেউ আঘাত করলে আমরা সেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারি। কৌশল বলম্বন করে নিজেকে রক্ষা করাটাই এর উদ্দেশ্য।
তাছাড়া দেশের প্রতিটি স্থানে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো নিশ্চিত হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে নারীদের। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে কারাতে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সুশীলন উপজেলা সমন্বয়ক সুরুজ মিয়া জানান, সারাদেশে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকার কাজ করছে। কিন্তু নারী যেন নিজেই তার প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আত্মরক্ষা করতে পারে তাই নারীদের মনোবল বৃদ্ধিতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মরিয়ম বেগম জানান, গ্রামাঞ্চলের নারী ও কিশোরীদের জন্য এই প্রশিক্ষণ সৌভাগ্যর বিষয়। সাধারণ শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা বেশি নির্যাতের শিকার হন। তাই নারীদের কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত।
ইমতিয়াজুর রহমান/এমএসআর