‘রাজাকারপুত্র’ পেলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করে ‘রাজাকারপুত্র’কে মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে পরিবর্তন করে বর্তমান চেয়ারম্যান মশিউর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে মনোয়নয়ন পরিবর্তনের খবর এলাকায় পৌঁছালে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এতে মশিউর সমর্থকরা খুশি হলেও, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মশিউরকে দুর্নীতিবাজ ও রাজাকার পরিবারের সন্তান দাবি করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭ অক্টোবর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। নির্দেশনা অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি। কিন্তু ১৪ অক্টোবর রাতে হঠাৎ দলের মনোনয়ন পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান পদে মশিউর রহমানকে মনোনয়ন দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এদিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের খবরে আব্দুস সাত্তারের সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে আব্দুস সাত্তারকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, চেয়ারম্যান মশিউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান। তিনি জনবিচ্ছিন্ন, বিতর্কিত ব্যক্তি। চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি পরিষদে বসতেন না, জনগণের ভালো-মন্দের খোঁজও রাখতেন না। ইউপি সদস্যদের মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীকে দিয়ে পরিষদ চালিয়েছেন।
দুর্নীতি, অনিয়ম, সালিস বাণিজ্য, অবৈধ বালি ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সরকারি বিধি ভঙ্গ করে গোপনে দেশের বাইরে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্তও হয়েছিলেন। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে হতাশা নেমে এসেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের সদ্য মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান খান বলেন, কেন্দ্র প্রার্থী নির্বাচনে ভুল বুঝতে পেরে পরিবর্তন করেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়েই আমি নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে সেটা মনগড়া ও ভিত্তিহীন।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, মশিউর রহমানের বাবা সৈয়দ আলী খান মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ প্রকাশিত রাজাকারের তালিকাতেও তার নাম রয়েছে। এখন তার পরিবারের অনেকেই আওয়ামী লীগ করলেও তারা চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী পরিবার। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি আরও বলেন, আগে মনোনয়ন পাওয়া আব্দুস সাত্তার ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়ে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতৃত্ব। তিনি দলের ত্যাগী নেতা। হঠাৎ মনোনয়ন পরিবর্তনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।
রাকিব হাসনাত/এসপি