ভোলায় গ্যাস লাইনে আসছে খনিজ তেল!
ভোলায় খনিজ তেলের সন্ধান মিলেছে এমন সংবাদ গত দুদিন ধরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, ভোলার চরনোয়াবাদ চৌমুহনী এলাকায় গ্যাস লাইনের মাধ্যমে মাটির তলদেশ থেকে খনিজ তেল উঠে আসছে এবং গ্যাসের পাশাপাশি ভোলায় খনিজ তেলের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাতে সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরনোয়াবাদ চৌমুহনী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক ফরাজির বাড়ি গেলে বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য।
সেখানে দেখা যায়, গ্যাস লাইনের সংযোগ রাইজার থেকে পাইপের মাধ্যমে খনিজ তেল নিয়ে বড় ড্রামে সংগ্রহ করছেন কয়েকজন যুবক। তাদের সঙ্গে এ তেলের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন।
সেখানেই কথা হয় ওই গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক ফরাজি বাড়ির আবুল কাশেম ফরাজির সঙ্গে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ আমাদের বাড়ির ৩টা রাইজারে ১০-১২টা ঘরের গ্যাস লাইনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানের জন্য সুন্দরবন গ্যাস অফিসে জানালে তারা বরিশাল থেকে লোক এনে সমাধানের কথা বলেন।
এরপর বরিশাল থেকে লোক এসে রাইজার ও গ্যাস পাইপের সংযোগ খুললে এক প্রকার তেল বেরিয়ে আসে। তারপর পুনরায় গ্যাস লাইন ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ঠিক করে দেওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় ওই একই সমস্যা দেখা দেয়। আবার সুন্দরবন গ্যাস অফিসে জানালে তারা এসে পাইপ খুলে তেল বের করে। গত ৩ দিন হলো নতুন করে আবারো সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারা প্রতিবার এসে কাজ করছে, কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। এভাবেই দুর্ভোগের মধ্যে দিন যাচ্ছে আমাদের। এ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান দিচ্ছে না গ্যাস অফিস।
ওই এলাকার ফোরকান মিয়া বলেন, এ এলাকায় গত ৬ মাস আগে সর্দার বাড়িতে প্রথম এ সমস্যা দেখা দেয়। তারপর থেকে এখানকার প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি ও বিভিন্ন মাদরাসায় একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমরা গ্যাস অফিসে জানালে তারা বলে লাইনে ময়লা আটকানো তাই গ্যাস আসছে না। একাধিকবার অভিযোগ করার পরে তারা এসে পাইপ থেকে তেল নামিয়ে গ্যাস চালু করে দেন। দুইদিন পর পর একই সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের ডাকলে তারা এসে তেল নামিয়ে নিয়ে যায়। এ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান দিচ্ছে না সুন্দরবন গ্যাস অফিস।
স্থানীয় মাদরাসার কোয়ার্টারে থাকা এমদাদ হোসেন বলেন, এ মাদরাসায় কয়েক শতাধিক ছাত্র পড়াশোনা করে এবং তাদের অনেকেই আবাসিক হিসেবে মাদরাসায় থাকে। তাদের রান্নাবান্না চলে গ্যাসের মাধ্যমে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের এ সমস্যার জন্য মাদরাসার ছাত্রদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি দিনের পর দিন বাসা-বাড়িতে গ্যাস বন্ধ থাকার কারণে ছোট ছোট বাচ্চাদের না খেয়ে থাকার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ সমস্যার দ্রুত স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।
ওই এলাকার নাসির মাতব্বর, মো. বশির ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একাধিক লোক অভিযোগ করে বলেন, সুন্দরবন গ্যাস অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসূত্রে গ্যাস পাইপের মাধ্যমে উত্তোলন করা খনিজ তেল স্থানীয় রতনের তেলের দোকানে বিক্রি করা হয়।
এদিকে, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ভোলা আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার অলিউর রহমান জানান, গ্যাস পাইপের মাধ্যমে খনিজ তেল উত্তোলন ও তেলের খনির বিষয়টি ভিত্তিহীন। মূলত গ্যাসের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মাটির তলদেশে কয়লা, পানি, খনিজ তেল, জীবাশ্ম জ্বালানিসহ নানা কিছু থাকে। সেখান থেকে ২-৩টা ধাপে ফিল্টারেশন করে গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বাপেক্স মূল ফিল্টারেশন করে আমাদের এখানে পাঠালে আমাদের এখানেও DRSS এর মাধ্যমে ফিল্টারেশন হয়। কোনো কোনো সময় পাইপ লাইনের উঁচু-নিচুর ফলে প্রেসারের কারণে বিভিন্ন রকম কয়লা, পানি, খনিজ তেল, জীবাশ্ম জ্বালানির মিশ্রিত বর্জ্য উঠে আসে। তাতে করে গ্যাস পাইপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন ধরে চরনোয়াবাদ এলাকায় এ সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। এটা সমাধানের জন্য আমরা নিয়মিত ওয়াশের মাধ্যমে ময়লা সারানোর কাজ করছি।
তিনি আরও জানান, এই সেক্টরটা মূলত অপারেশন বিভাগের। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। অপারেশন বিভাগ বাপেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। বাপেক্সও ফিল্টারেশনের কাজ করছে। আশা করি অচিরেই এর সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আর গ্যাস পাইপের মাধ্যমে তেল উত্তোলন করে বিক্রির বিষয়ে তিনি জানান, মূলত গ্যাস লাইনের মাধ্যমে কোনো তেল উত্তোলন হচ্ছে না। যে লাইনে সমস্যা দেখা দেয় সেখানে রাইজার খুলে ওয়াশ করে দেওয়া হয়। এ সময় যে খনিজ তেল উঠে আসছে তা অতি সামান্য। এই তেল সংগ্রহ করে আমাদের ডিপোতে রাখা হয়। বাইরের দোকানে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, জেলায় ইতোমধ্যে ৬টি কূপ খনন হয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন আরো ৩টি কূপ খনন হবে। এ ৩টি কূপের খনন শুরু হলে জেলায় সর্বমোট গ্যাস কূপের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯টিতে।
ইমতিয়াজুর রহমান/এমএএস