পূজামণ্ডপে সম্মুখযোদ্ধাদের প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা
পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবে মেতে উঠছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সবচেয়ে বড় এ উৎসব ঘিরে নানা রঙে সেজেছে পূজামণ্ডপগুলো। বৈচিত্র্যময় সাজসজ্জা আর দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা আকৃষ্ট করছে ভক্তদের। এর মধ্যে কিছু সজ্জা সহজেই নজর কাড়ে। আর তা যদি হয় করোনাকালের সম্মুখযোদ্ধাদের নিয়ে, তাহলে তো বাড়তি আকর্ষণ। এমনই এক ব্যতিক্রমী আয়োজন রংপুর নগরের একটি পূজামণ্ডপে।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরের পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের ব্যতিক্রম পূজামণ্ডপে দেখা গেছে অন্য রকম চিন্তার চিত্রায়ণ। যার প্রশংসা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
মণ্ডপে দেখা যায়, মণ্ডপটির প্রবেশপথে পা বাড়াতেই চোখে পড়বে অ্যাম্বুলেন্স। দাঁড়িয়ে আছেন ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) পরিহিত চিকিৎসক। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগী নামাতে ব্যস্ত নার্সরা। সেবা দিচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের। প্যান্ডেলের আরেক দিকে পুলিশের গাড়ি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। যাদের মুখে মাস্ক নেই, তাদের মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। কেউবা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে চিকিৎসক ও পুলিশের মতো মাঠে ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। সেই চিত্রটাও বাদ যায় এ পূজামণ্ডপে। সেখানে দেখা গেল ক্যামেরার সামনে একজন টেলিভিশন রিপোর্টার লাইভ করছেন। যেন করোনা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে জনগণকে তথ্য জানাতে সাংবাদিকদের নিরন্তন প্রচেষ্টার জীবন্ত প্রতিকৃতি।
আয়োজকরা জানান, করোনা মহামারির শুরুর দিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরা মাঠে থেকেছেন। তারা মানুষের জন্য লড়েছেন। সেসব সম্মুখযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ উদ্যোগ। এসব চিত্র শোলা (ককশিট) দিয়ে তৈরি করে মাঠের দুই দিকে ফ্রেমে সাঁটানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে চিত্রশিল্পী উৎপল দে জানান, বাড়ির পাশের পূজামণ্ডপে করোনায় সম্মুখযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু ককশিটের কাজ করেছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দেশে করোনা মহামারি চলছে। সম্মুখযোদ্ধাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি হয়েছে। দিন দিন টিকা গ্রহণেও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে দেবী দুর্গা। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য কিছু করতে পেরেও গর্ববোধ করছি। এটা তাদের প্রাপ্য।
এবার রংপুর জেলায় ৯৫৬টি মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেবী দুর্গার পূজা আরাধনা শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার ছিল দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। নগরের মণ্ডপে মণ্ডপে বাজছে ঢাক, কাঁসর ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনি। প্রকৃতির আদলে সাজানো বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। অনেকেই মণ্ডপে সপরিবার এসে দেবী দুর্গার আরাধনা করছেন।
এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন সম্পন্ন করতে প্রতিটি মণ্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধীমান ভট্টাচার্য বলেন, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা শারদীয় উৎসব পালন করছি। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বুধবার ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমী। এর পরদিন ১৪ অক্টোবর মহানবমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার ১৫ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ